বন্ধুর সাথে বন্ধুর পথে বেড়িয়ে পড়তে মন্দ লাগে না কিন্তু জীবনে কোন না কোন সময় আসে যখন বাড়ির বাইরে পথে একলা চলতে হয়। আবার বর্তমান ব্যস্ত সময়ে সবার জীবনের ছন্দ মিলিয়ে কোথাও ঘুরতে যাবার ছক কাটাও বেশ মুশকিলের ব্যাপার। তাই হয়তো স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে গেছেন-
‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে
তবে একলা চলোরে…’
কবিগুরু সঙ্গীর অভাব পূরণে একলা চলবার তাগাদা দিয়ে গেলেও একলা ভ্রমণের ক্ষেত্রে কি করা উচিত বা অনুচিত তা আমরা অনেকেই জানি না। জানার সেই অপূর্ণতা পূরণের উদ্দেশ্যে চলুন জেনে নেই একা ভ্রমণ করবার কিছু জরুরী টিপস।
আত্মবিশ্বাস: একা ভ্রমণে সাহস ও আত্মবিশ্বাসই সবচেয়ে বেশি দরকার। সাহস করে একবার বেরিয়ে পরলে নিজের প্রতি বিশ্বাস এমনিই বেড়ে যাবে বহুগুণে। আমাদের দেশে সাধারণত কোথাও একা যাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ নিরুৎসাহিত করা হয়। তাই একবার মনস্থির করে ফেললে সলো ট্রাভেলিং নিয়ে আশেপাশের নেতিবাচক মন্তব্যকে পাত্তা দিবেন না। একা ভ্রমণে আপনি নিজেই আপনার গাইড-কাউন্সিলর। নিজের বুদ্ধির উপর আস্থা রেখে সাহস নিয়ে যাত্রা শুরু করুন।
গন্তব্য নির্বাচন: প্রথমবার একা ভ্রমণে বের হলে গন্তব্য নির্বাচন খুব জরুরী। অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে বিপদে পরতেই পারেন। তাই প্রথমবার সলো ট্রাভেলিংয়ের ক্ষেত্রে টুরিস্ট ফ্রেন্ডলি কোন স্থান নির্বাচন করলে খুবই ভাল হয়। কেননা এসকল জায়গায় স্থানীয় মানুষরা টুরিস্টদের বিভিন্ন ধরণের সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন।
বাজেট: কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাজেটের উপর ভ্রমণের অনেক বিষয়ই নির্ভর করে। আর বাজেটের একটা বড় অংশ চলে যায় আবাসিক হোটেলের পেছনে। কিন্তু একা ঘুরতে গেলে আবাসিক হোটেলে না থেকে নিজের সুবিধামতো হোস্টেল, বিএনবি, ব্যকপ্যাক হোস্টেল ব্যবহার করা যায়, ফলে হোটেলের খরচ অর্ধেক কমে যায়। তাই সলো ভ্রমণের ক্ষেত্রে হোস্টেল বা অনেক সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে অর্থের বিনিময়ে থাকা ও খাওয়ার সুবিধা নিতে পারেন।
ব্যবহার: বিনয়ী মনোভাব বা ভাল ব্যবহার সর্বক্ষেত্রেই জরুরী। একা বেড়ানোর ক্ষেত্রে আপনার ভদ্র ব্যবহার অনেক অবাঞ্চিত সমস্যা এড়াতে এবং আলাদা সুবিধা আদায়ে সাহায্য করবে।
ভ্রমণ অন্বেষণ: দলবেঁধে ঘুরতে গেলে দলের সবার সময় জ্ঞান, শরীরের অবস্থা, খাবার দাবার, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি অনেক কিছুই ভ্রমণের উপর প্রভাব ফেলে। একা ভ্রমণে আপনি ইচ্ছে করলেই ছকে বাধা কাজের বাইরে গিয়ে রিলাক্সেশনের পাশাপাশি অনেক কিছু আত্মস্থ করতে পারবেন, যা ছক বাঁধা ভ্রমণে সম্ভব হয় না।
খাপ খাওয়ানো: যেখানেই যান না কেন সেখানে বহিরাগতদের মতো আচরণ না করলে আপনি একা চলাচলের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নিরাপদ থাকবেন। যদিও এক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস এবং শরীরের ভাষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে লোকাল যানবাহনে চরার সময় আপনি এখানে নতুন, জায়গাটা চিনেন না কিংবা একা ভ্রমণ করছেন তা কাউকে বুঝতে দিবেন না।
যানবাহন: একা ভ্রমণে লোকাল যানবাহনে যাতায়াত করার চেষ্টা করুন। আর অবশ্যই আগে ভাড়া ঠিক করে নিন। এতে করে যাতায়াত খরচ অনেক কম হবে।
নিরাপত্তা: আপনাকেই আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাতের বেলা অপরিচিত বা দূর কোন স্থানে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। সন্ধ্যার পর খুব বেশি বাইরে যেতে ইচ্ছে হলে জনসমাগম বেশি এমন সব জায়গায় যেতে পারেন। এছাড়া দামী ডিভাইস বা গহনা সাথে রাখা থেকে বিরত থাকুন।
কাগজপত্র গুছিয়ে রাখুন: দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে পাসপোর্ট, ভিসার কাগজপত্র নিজের সাথে সাবধানে রাখুন। এছাড়াও পাসপোর্ট, ভিসা ও অন্যান্য জরুরী কাগজপত্রের কিছু ফটোকপি রাখতে ভুল করবেন না।
লোকেশন শেয়ার: সুযোগ থাকলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজের লোকশন গুগলের মাধ্যমে আস্থাভাজন বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করুন। সবসময় কাউকে না কাউকে জানিয়ে দিন আপনি কোথায় আছেন, কি করছেন। চাইলে হোটেলের ঠিকানা, আপনার ফোন নম্বর বিশ্বস্থ কাউকে জানিয়ে রাখতে পারেন। একা ভ্রমণ এবং সন্ন্যাস গ্রহণ এক জিনিস নয় – এটা মনে রাখা খুব জরুরী।
পোশাক নির্বাচন: ফর্মাল জামাকাপড় না নিয়ে ক্যাজুয়াল আরামদায়ক পোষাক পরে ঘুরতে যান। এতে পর্যটক হিসেবে আপনার প্রতি মনোযোগ কম আকৃষ্ট হবে এবং অযথা বিপদের হাত থেকেও রক্ষা পাবেন।
নিজের তথ্য: হোটেল বা ট্যুর এজেন্সিতে আপনার পরিচয় গোপন করবেন না। তবে রাস্তায় বা ভ্রমণে স্বল্প পরিচিত মানুষের কাছে নিজের সম্পর্কে উদার আলোচনাও করতে যাবেন না।
সিদ্ধান্তহীনতা: অন্যের উপর নির্ভর না করে নিজেই সিদ্ধান্ত নিন। কোন ব্যপারে দ্বিধায় ভুগলে সেই কাজ করা থেকে বিরত থাকাই উত্তম।
প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে রাখুন: যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার থানা, হাসপাতালের মত প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগের ফোন নাম্বর ইন্টারনেট বা স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।
নিয়ন্ত্রিত থাকুন: বাইরে বের হলে নিজের প্রয়োজনীয় সকল কিছু যেমন ওষুধ, শুকনো খাবার, পানি ইত্যাদি সবসময় সাথে রাখুন। কারণ একা মানুষের উপর অপরাধীদের নজর বেশি থাকে। তাই ঝুঁকি এড়াতে অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত কারো কাছ থেকে এ ধরণের সেবা নেওয়া উচিত নয়।
আইনে প্রতি শ্রদ্ধা: যেখানেই যান না কেন আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন এবং বেআইনি যেকোন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
পরিশেষে, একা ভ্রমণ মোটেও অনিরাপদ নয়। যদি নিজের বুদ্ধি বৃত্তির উপর আস্থা রেখে পরিবেশকে সামাল দেওয়া যায়। হাজার হাজার মানুষ একাই তাদের নিজের মতো করে অজানাকে জানার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করছে, নিজেকে আবিষ্কার করছে নতুনভাবে। আপনার এখন কেবল বুকে সাহস নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে পরাটাই বাকি।
Featured Image by Cosmopoltravel.com
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।