চা বাগানের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে টি বোর্ডের উদ্যোগে ২০০৯ সালে চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চা রিসোর্ট ও জাদুঘর (Sreemongol Tea Resort And Museum) প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশের চা শিল্পের প্রায় দেড়শ বছরের প্রাচীন ইতিহাস এবং চা চাষ সম্পর্কিত সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চা গবেষণা কেন্দ্রের কাছে চারটি কক্ষে ৪৪ টির অধিক সংগ্রহ ও স্মারকের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে এই চা জাদুঘরকে। চা জাদুঘরের পাশে মনোমুগ্ধকর টি রিসোর্টের অবস্থান। মূলত পুরানো একটি বৃটিশ বাংলোকে আধুনিক রিসোর্টের রূপ দেয়া হয়েছে।
চোখ জুড়ানো সবুজ চা বাগানে ঘেরা এই জাদুঘরে ব্রিটিশ শাসনামলে চা বাগানে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ব্রিটিশ বাংলোয় ব্যবহৃত শতাধিক আসবাপত্র, চা প্রসেসিং যন্ত্রপাতি, চা বাগানের ম্যানেজার ও চা শ্রমিকদের ব্যবহৃত জিনিস, প্রাচীন রৌপ্য ও তাম্য মুদ্রাসহ বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন স্থান পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের স্মৃতি বিজড়িত একটি কক্ষ এই চা জাদুঘরের বিশেষ আকর্ষণ। ১৯৫৭-৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু পাকিস্থান চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে শ্রীমঙ্গলের নন্দবাড়ি চা বাগান পরিদর্শনে আসেন। তাঁর ব্যবহৃত চেয়ার ও টেবিল এই জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এছাড়া রয়েছে সাদা পাঞ্জাবি পাজামা পরিহিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের একটি বিশেষ প্রতিকৃতি, যা দেখে মুগ্ধতা ছুঁয়ে যায়।
প্রবেশ মূল্য ও সময়সূচী: চা জাদুঘর প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে প্রবেশ টিকেটের মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ট্রেন এবং বাসে চড়ে সিলেটের শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত বা কালনি এক্সপ্রেসে শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। শ্রেণিভেদে ভাড়া পড়বে ২২০ থেকে ১০০০ টাকা। চাইলে হানিফ, এনা, শ্যামলী এবং সিলেট এক্সপ্রেসের মতো বাসেও শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন। শ্রীমঙ্গল হতে ইজিবাইক বা অটো রিকশা নিয়ে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চা জাদুঘর ঘুরে আসতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
চা জাদুঘরের পাশেই রয়েছে চা বাগান ঘেঁষা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন টি রিসোর্ট। অগ্রিম বুকিং দিয়ে এখানে থাকা যায়। এছাড়া কম খরচে রাত্রি যাপনের জন্য শ্রীমঙ্গলে হোটেল মেরিনা, টি হাউজ রেস্ট হাউজ, প্যারাডাইস লজ, হোটেল মহসিন প্লাজা, হোটেল আল রহমানের মতো বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে।
কোথায় খাবেন
শ্রীমঙ্গল শহরের গ্র্যান্ড তাজ, হাবিব হোটেল, কুটুম বাড়ী ও শ্রীমঙ্গল ইনের খাবার বেশ জনপ্রিয়। তবে রিসোর্টে থাকলে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খাওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। আর শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসলে অবশ্যই সাত রঙের চায়ের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
মৌলভীবাজারের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান : মৌলভীবাজারের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, বাইক্কা বিল, মাধবকুন্ড ও হামহাম জলপ্রপাত উল্লেখযোগ্য।
ফিচার ইমেজ: শামীম খান
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।