সোমেশ্বরী নদী (Someshwari River) ও তার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে যেতে হবে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায়। ভারতের মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের সীমসাংগ্রী নামক স্থান থেকে উৎপন্ন হয়ে সোমেশ্বরী নদীটি দুর্গাপুরে প্রবেশ করেছে। লোকমুখে প্রচলিত অনেককাল আগে সোমেশ্বর পাঠক নামে এক ব্যক্তির দ্বারা এ অঞ্চল দখল হয়ে যায়, পরবর্তীতে তার নামানুসারেই নদীটি সোমেশ্বরী নদী হিসাবে পরিচিতি পায়। বছরের ভিন্ন ভিন্ন সময় সোমেশ্বরী নদী একেক রকম সৌন্দর্য মেলে ধরে। শীতকালে পানি কমে গেলেও সদা স্বচ্ছ জলের সোমেশ্বরী নদী বর্ষায় যেন যৌবন ফিরে পায়। বর্তমানে কয়লা খনি হিসেবে অধিক পরিচিত হলেও সোমেশ্বরী নদী সৌন্দর্য্যে একটুও ভাটা পরেনি।

সোমেশ্বরী নদী নিয়ে তথ্যমূলক ভিডিও
https://youtu.be/bx0tIXU5e2E

দুর্গাপুরে আর যা যা দেখবেন

সারাদিন ঘুরার জন্য মোটরসাইকেল বা সিএনজি ভাড়া করে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো। দুর্গাপুরের তালুকদার প্লাজার সামনে থেকে মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে, গোলাপী পাহাড়, গারো পাহাড়, চীনা মাটির পাহাড়ের নীল পানির হ্রদ, বিজয়পুর বিজিবি ক্যাম্প, রানিখং চার্চ ইত্যাদি থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। এছাড়া ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে দেখতে পাবেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিংয়ের জন্য তৈরী কিছু পিলার।

সোমেশ্বরী নদী দেখতে যেভাবে যাবেন

ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি দুর্গাপুরের উদ্দেশ্যে সরকার এবং জিন্নাত পরিবহণের বাস ছেড়ে যায়। এ দুটি বাসে চড়ে দুর্গাপুর যেতে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা লাগে। দুর্গাপুর বলা হলেও সাধারণত এই বাসগুলো সুখনগরী পর্যন্ত যায়। সুখনগরী থেকে নৌকায় করে একটা ছোট নদী পার হয়ে রিকশা, বাস বা মোটর সাইকেলে দূর্গাপুর যেতে হয়। বাস যেতে ২০ টাকা, রিকশায় যেতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং মোটর সাইকেলে ২ জন ১০০ টাকা ভাড়ায় দুর্গাপুর যাওয়া যায়।

ঢাকা থেকে রাত ১১ টা ৫০ মিনিটে হাওড় এক্সপ্রেস নামের ট্রেনে করে শ্যামগঞ্জ ট্রেন স্টেশনে নেমে সেখান থেকে বাস বা সিএনজি ভাড়া নিয়ে বিরিশিরি বাজার যাওয়া যায়। কিংবা একটু সহজে যেতে চাইলে হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনে নেত্রকোনা এসে চল্লিশা বাজার থেকে মোটর সাইকেলে জনপ্রতি ৩০০ টাকা ভাড়ায় সব স্পট দেখে ফিরতে পারবেন। এছাড়া বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভোর ৪.০০/৪.৩০ তে যাত্রা করা জারিয়া স্টেশনগামী ট্রেনে করে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় জারিয়া এসে ট্রলার, অটো, সিএনজি বা মোটরসাইকেলে করে দূর্গাপুর যাওয়া যায়।

এছাড়া দেশের যে কোন জায়গা থেকে নেত্রকোনা জেলা সদরে এসে মোটরসাইকেল বা সিএনজি দিয়ে দুর্গপুর যেতে পারবেন। দুজনের জন্যে মটরসাইকেলে দুর্গাপুর যেতে ভাড়া লাগবে ৩৫০-৪০০ টাকা।

দুর্গাপুর থেকে ঢাকা ফিরতে দুর্গাপুরের তালুকদার প্লাজার সামনে থেকে রাত ১১ টা এবং ১১ টা ৩০ মিনিটে দুটি নাইট কোচ ঢাকার মহাখালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এছাড়া জারিয়া ট্রেন ষ্টেশনে হতে দুপুর ১২ টায় একটি ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে।

[* বর্তমানে রাস্তার সমস্যার জন্যে কোন বাস সরাসরি দুর্গাপুর যায় না, যাবার আগে একটু খুঁজ নিয়ে নিবেন।]

কোথায় থাকবেন

সুসং দুর্গাপুরে রাত্রিযাপনের জন্য জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, বেশকিছু গেস্ট হাউস এবং মধ্যম মানের আবাসিক হোটেল আছে। প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন – জেলা পরিষদ ডাক বাংলো (01558380383, 01725571795), ইয়ুথ মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএ-এর রেস্ট হাউস(01818613496, 01716277637, 01714418039, 01743306230, 01924975935, 01727833332), YWCA গেষ্ট হাউজ( 01711027901, 01712042916), ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমী গেষ্ট হাউজ ( 09525-56042, 01815482006)

দুর্গাপুরে মধ্যম মানের হোটেলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – স্বর্ণা গেস্ট হাউস ( 0171228698, 01728438712), হোটেল সুসং (01914791254), হোটেল গুলশান(01711150807), হোটেল জবা (01711186708, 01753154617), নদীবাংলা গেষ্ট হাউজ ( 01771893570, 01713540542)। এই হোটেলগুলোতে ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে।

কোথায় খাবেন

দুর্গাপুরে বেশকিছু সাধারণ মানের খাবারের হোটেল রয়েছে, যার মধ্যে নিরালা হোটেল বেশ প্রসিদ্ধ। এছাড়া আশেপাশে আরো বেশকিছু খাবার হোটেল রয়েছে তবে সেগুলোতে ভারি খাবার পরিহার করার উত্তম। বেশি খিদে পেলে ডিম, পরোটা দিয়ে খেদে নিবারন করতে পারেন। অবশ্যই দূর্গাপুর বাজার থেকে নেত্রকোণার বিখ্যাত বালিশ মিষ্টির স্বাধ নিতে ভুল করবেন না। এছাড়া বিরিশিরি বাজারেও মোটামুটি মানের খাবার হোটেল আছে।

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে

ম্যাপে সোমেশ্বরী নদী, দুর্গাপুর

শেয়ার করুন সবার সাথে

ভ্রমণ গাইড টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ পাতায় যোগাযোগ করুন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ গাইড দায়ী থাকবে না।