শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ ময়দান। ১৮২৮ সাল থেকে এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ৭ একর আয়তনের শোলাকিয়া ঈদগাহ (Sholakia Eidgah) মাঠে মোট ২৬৫ সারি আছে এবং প্রতি সারিতে প্রায় ছয়-সাতশ করে মুসল্লি দাঁড়াবার ব্যবস্থা আছে। সেই হিসেবে মাঠে এক লাখ ষাট থেকে আঁশি হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে প্রতিবছর ঈদুল ফিতরের সময় দেখা যায় মাঠে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় চারপাশের খোলা জায়গা, আশপাশের সড়ক, আশেপাশের ঘর বাড়ির উঠানেও নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এভাবে প্রায় তিন লাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ পড়ে থাকেন। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ও বিদেশ থেকে অনেক মুসুল্লির আগমনে এ মাঠের ঈদের জামাতের মর্যাদা অনেক বেড়ে গেছে। এমনকি বহু পর্যটক এই অভূতপূর্ব মহামিলনের সময়টি দেখার দেখার জন্যে শোলাকিয়ায় উপস্থিত হয়।
মাঠের ইতিহাস
ইসলামের ঐশী বাণী প্রচারের জন্য সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত শোলাকিয়া ‘সাহেব বাড়ির’ পূর্বপুরুষ সুফি সৈয়দ আহমেদ তার নিজস্ব তালুকে ১৮২৮ সালে নরসুন্দা নদীর তীরে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন।ওই জামাতে ইমামতি করেন সুফি সৈয়দ আহমেদ নিজেই। অনেকের মতে, মোনাজাতে তিনি মুসললিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে ‘সোয়া লাখ’ কথাটি ব্যবহার করেন। আরেক মতে, সেদিনের জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার (অর্থাৎ সোয়া লাখ) লোক জমায়েত হয়। ফলে এর নাম হয় ‘সোয়া লাখি’। পরবর্তীতে উচ্চারণের বিবর্তনে শোলাকিয়া নামটি চালু হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ বলেন, মোগল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। উচ্চারণের বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া সেখান থেকে শোলাকিয়া। পরবর্তিতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় হয়বতনগর দেওয়ান পরিবারের অন্যতম দেওয়ান মান্নান দাদ খানের বদান্যতায় এ মাঠের কলেবর বৃদ্ধি পায় এবং এবং এর পরিধি বিস্তৃতি লাভ করে। দেওয়ান মান্নান দাদ খান ছিলেন বীর ঈশা খাঁর অধঃস্তন বংশধর।
কিভাবে যাবেন
শোলাকিয়া আসতে চাইলে আপনাকে যে কোন উপায়ে প্রথমে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে আসতে হবে। ঢাকা থেকে আসতে চাইলে ট্রেনে অথবা বাসে করে কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশান থেকে সকাল ৭ টা ১৫ মিনিটে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে উঠলে ১১ টার মধ্যে কিশোরগঞ্জ পৌঁছে যাবেন। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ ট্রেনের টিকেট কাটতে শ্রেনী ভেদে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা লাগে। কিশোরগঞ্জ রেল স্টেশনে নেমে ২৫ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে সহজেই চলে যেতে পারবেন শোলাকিয়া ময়দানে।
আর বাসে করে আসতে চাইলে ঢাকার মহাখালী বা গোলাপবাগ বাস স্ট্যান্ড থেকে কিশোরগঞ্জ গামী যেকোন বাসে করে কিশোরগঞ্জের গাইটাল বাস চলে আসুন। বাস ভাড়া ২৭০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। এরপর ৪০টাকা রিক্সা ভাড়া বা লোকাল ইজিবাইকে ১০টাকা ভাড়ায় চলে আসুন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে।
ঈদে স্পেশাল সার্ভিস : ঈদের জামাত পড়তে চাইলে আপনি যদি দূর থেকে আসেন তাহলে আপনার উচিৎ হবে আগের দিনই চলে আসা। এছাড়া ঈদের জামাতের জন্যে ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস চালু থাকে। ঈদের দিন খুব সকালে স্পেশাল ট্রেন দুটি কিশোরগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। একসাথে অনেকজন মিলে আসলে বাস কিংবা কোন প্রাইভেট গাড়ি রিজার্ভ করেও চলে আসতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
কিশোরগঞ্জ শহরে ধানসিঁড়ি, দারুচিনি, গাংচিল, ইস্টিকুটুম, তাজ, মাছরাঙ্গা ইত্যাদি রেস্টুরেন্টে পছন্দের খাবার খাওয়া। মিষ্টি পাগল হলে ছেঁকে দেখতে পারেন একরাম্পুরের লক্ষী নারায়ণ মিস্টান্ন ভান্ডারে কিংবা মদন গোপালে।
থাকার ব্যবস্থা
রাতে থাকতে চাইলে কিশোরগঞ্জ সদরের স্টেশন রোড এলাকায় রিভার ভিউ, গাংচিল, নিরালা, উজানভাটি, ক্যাসেল সালাম নামে বেশ কিছু ভাল মানের আবাসিক হোটেল রয়েছ। এছাড়া অনুমতি সাপেক্ষে জেলা সদরের সরকারি ডাক-বাংলোতে থাকতে পারবেন।
আশেপাশে দর্শনীয় স্থান
যদি হাতে সময় থাকে তাহলে কিশোরগঞ্জ ভ্রমণে আরও যা দেখতে পারেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কবি চন্দ্রাবতী মন্দির, গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি, কিশোরগঞ্জ লেক পার্ক, মিঠামইন হাওর ও নিকলী হাওর ইত্যাদি।
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।