শৈলপ্রপাত ঝর্ণা বান্দরবান জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-থানচি রোডের পাশে অবস্থিত। বাংলাদেশে অতিপরিচিত ঝর্ণা গুলোর মধ্যে শৈলপ্রপাত অন্যতম। পর্যটন নগরী বান্দরবানের কাছে হওয়ায় সারা বছরই পর্যটক সমাগমে মুখরিত থাকে স্বচ্ছ ও ঠান্ডা পানির এই ঝর্ণাটি। এ ঝর্ণার বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে সবসময় বহমান হীম শীতল পানির ধারা, যা শৈলপ্রপাতকে বান্দরবানের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হিসাবে করে নিয়েছে। এছাড়া এই ঝর্ণার পাশে পিকনিক করার জন্য রয়েছে আদর্শ পরিবেশ। পাহাড়, ঝর্ণা এবং গ্রামীণ জীবনযাত্রার মিতালী দেখতে আপনাকে অবশ্যই শৈলপ্রপাতে যেতে হবে।
কখন যাবেন ও কি দেখবেন
বাংলাদেশের যে কোন ঝর্ণার আসল সৌন্দর্য দেখার সবচেয়ে আদর্শ সময় হচ্ছে বর্ষা মৌসুম। বর্ষাকালেই ঝর্ণা পূরো যৌবন লাভ করে। অবশ্য শৈলপ্রপাত ঝর্ণা বছরের একেক সময় একেক সৌন্দর্য্য মেলে ধরে। তাই বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ে বান্দরবান গেলে শৈলপ্রপাতকে উপেক্ষা করা উচিত হবে না। তাছাড়া শৈলপ্রপাতকে উদ্দেশ্য করে আলাদা ভাবে বান্দরবানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ বান্দরবানের অন্যতম দর্শনীয় স্থান চিম্বুক বা নীলগিরি যাওয়ার পথে শৈলপ্রপাতের সামনে দিয়েই যেতে হয়। কাজেই সবচেয়ে ভালো হয় নীলগিরি বা চিম্বুক পাহাড় দেখতে যাবার সময় ভাড়া করা গাড়ি রাস্তার পাশে থামিয়ে শৈলপ্রপাত দেখে নেওয়া। আর যদি শুধুই শৈলপ্রপাত দেখতে চান তাহলে সেটাও করতে পারেন।
শৈলপ্রপাত গেলে বম উপজাতীয়দের জীবনধারা চোখে পড়বেই। বমদের হাতে বোনা চাদর, মাফলার, বেডশিট, বেত ও বাঁশের তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র স্মারক হিসাবে কিনে নিতে পারেন। এছাড়া বমদের উৎপাদিত বিভিন্ন মৌসুমী ফলমূলের স্বাদ চেখে দেখতে পারেন অনায়াসেই।
যাওয়ার উপায়
ঢাকার আবদুল্লাহপুর, আরামবাগ, কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ ও গাবতলী থেকে এস. আলম, সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ইউনিক, হানিফ, শ্যামলি, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দারবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি এসব বাসের ভাড়া যথাক্রমে নন এসি ৭০০-৮০০ টাকা ও এসি ১০০০-১৬০০ টাকা। ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবান যেতে সময় লাগে ৮-১০ ঘন্টা।
ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম গামী সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিতা, মহানগর গোধূলি এইসব ট্রেনে করে চট্রগ্রাম যেতে পারবেন। শ্রেনীভেদে ভাড়া ৩৪৫ থেকে ১২২৯ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে আকাশ পথে সরাসরি চট্রগ্রাম আসতে পারবেন।
চট্টগ্রামের বদ্দারহাট থেকে পূবালী ও পূর্বানী নামের দুটি বাদ বান্দারবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ দুটি বাসে জনপ্রতি ২২০ টাকা ভাড়া লাগে। চট্রগ্রামের ধামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ২০০-৩০০ টাকা ভাড়ায় বাসে করে বান্দরবান আসতে পারবেন।
বান্দরবান থেকে শৈলপ্রপাত
বান্দরবান থেকে সিএনজি/জীপ/চান্দের গাড়ি তে করে শৈলপ্রপাত যেতে পারবেন। শুধু শৈলপ্রপাত দেখতে গেলে যাওয়া আসা সহ খরচ পরবে ৫০০-৮০০ টাকা। এছাড়া আপনি চিম্বুক বা নীলগিরি গেলে যাওয়ার পথেই দেখতে পারবেন। সেভাবেই ভ্রমণ পরিকল্পনা করে নিতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
সাধারণত বেশীরভাগ পর্যটক শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি থেকে দিনে গিয়ে দিনেই বান্দরবান ফিরে আসেন। বান্দরবানে হলিডে ইন রিসোর্ট, হিল সাইড রিসোর্ট, হোটেল ফোর স্টার, হোটেল রিভার ভিউ ইত্যাদি সহ অসংখ্য রিসোর্ট, হোটেল, মোটল এবং রেস্টহাউজ রয়েছে, যেগুলোতে ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় সহজেই রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
বান্দরবানের কাছে হওয়ায় বান্দরবান শহরেই খাওয়া দাওয়া করতে পারবেন। পর্যটকদের খাবার জন্য বান্দরবান শহরে মাঝারি মানের বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। সেগুলো থেকে নিজের পছন্দ মত হোটেলে তিন বেলার খাবার খেয়ে নিতে পারেন। তার মধ্যে তাজিং ডং ক্যাফে, মেঘদূত ক্যাফে, ফুড প্লেস রেস্টুরেন্ট, রুপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট, রী সং সং, কলাপাতা রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি। এছাড়া শৈল প্রপাত ঝর্ণার সামনেই স্থানীয় নানা মৌসুমী ফল নিয়ে আদিবাসী মানুষজনের দোকান আছে। সেখানে অল্প দামে এইসব বিষমুক্ত তাজা ফল খেয়ে দেখতে পারেন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
শৈলপ্রপাত ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
- শৈল প্রপাতের নিচে হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন, অনেক পিচ্ছিল পাথুরে পথ। একটু অসাবধানতার জন্যে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
- গাড়ি ঠিক করার ক্ষেত্রে দরদাম করে নিন, তেমনি হোটেল রুম ভাড়া করার সময়েও।
- সিজনে ছুটির দিনে গেলে আগে থেকে হোটেল বুকিং দিয়ে রাখতে পারেন।
- বিভিন্ন রেস্তোরায় স্থানীয় আদিবাসীদের খাবার পাওয়া যায়, স্বাদ নিতে পারেন।
- বর্ষায় ঝর্ণায় অনেক পানি, থাকে গোসলে সতর্ক থাকুন।
- কম খরচে বান্দরবান ঘুরতে চাইলে অফসিজন বা ছুটির দিন ব্যাতিত অন্যদিন ভ্রমণ করুন।
- পাহাড়ি পথে ভ্রমণের সময় সতর্ক থাকুন।
- পর্যটন স্পট গুলোর পরিবেশের ক্ষতি এমন এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন।
- ময়লা আবর্জনা, চিপসের প্যাকেট, পলিথিন এইসব নিদৃষ্ট স্থানে ফেলুন।
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।