ঝিনাইদহ জেলার কুমার নদের উত্তর তীরে শৈলকুপা উপজেলার পৌর শহরের দরগাপাড়ায় বাংলাদেশের মধ্যযুগীয় পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন শৈলকুপা শাহী মসজিদ (Shailkupa Shahi Mosque) অবস্থিত। ধারণা করা হয়, ভারতে মোঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে ১৫২৩-২৪ সালের মধ্যে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের পুত্র নাসির শাহ্‌র ওরফে নসরত শাহ্‌র এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৫১৯ সালে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের মৃত্যুর পর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ্‌ রাজকর্মে গৌড় থেকে ঢাকা যাবার পথে কিছুদিন শৈলকুপায় অবস্থান করেছিলেন। সেই সময় দরবেশ আরব শাহ্‌ তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে সাথে ছিলেন। দরবেশ আরব শাহ্‌ শৈলকুপায় থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে সুলতান তার দুই শিস্যসহ শৈলকুপায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়াও তিনি এই মসজিদটি সংস্কার, সংরক্ষণ ও পরিচালনার জন্য কয়েকশ বিঘা জমি মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দেন। যার ফলশ্রুতিতে মসজিদের মূল প্রবেশ পথ ও মিনারগুলো পরবর্তী সংস্কারের সময় সংযোজন করা হয়।

মধ্যযুগের চমৎকার স্থাপত্যশিল্পে নির্মিত শৈলকুপা শাহী মসজিদের পুরো অংশে লাল রঙের ছোট ছোট ইট ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের উত্তর দক্ষিণে দৈর্ঘ্য ৩১.৫ ফুট ও প্রস্থ ২১ ফুট এবং দেয়ালগুলো ৫.৫ ফুট প্রশস্ত। ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের চারকোণায় অলংকৃত গোলাকৃতি ৪টি মিনার, পাঁচ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট দুইটি স্তম্ভ, সাতটি প্রবেশ পথ ও ৩টি মেহরাব রয়েছে। মসজিদের উত্তর দিকে একটি পুকুর এবং পূর্ব দিকে ৩০-৪৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি মাজার রয়েছে। স্থানীয়দের মতে, এটি পীর শাহ্‌ মোহাম্মদ আরিফ-ই-রব্বানী ওরফে আরব শাহের মাজার। পীরের মাজারের কাছে আরো ৬ জন আউলিয়ার মাজার আছে।

প্রায় পাঁচশত বছরের পুরনো শৈলকুপা শাহী মসজিদ প্রাচীন ঐতিহ্য ও মধ্যযুগীয় মুসলিম স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। বিভিন্ন সময় সংস্কার করে মসজিদের আদি কাঠামোতে পরিবর্তন করা হলেও সুলতানী আমলের ঐতিহ্য এখনো স্পষ্ট। সুলতানী স্থাপত্যের আকর্ষণীয় এই শাহী মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী আসেন।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার গাবতলী থেকে রয়েল, সোনার তরী, এসবি পরিবহণ, জেআর পরিবহণ, চুয়াডাঙ্গা, হানিফ, দর্শনা বা পূর্বাশা ডিলাক্স বাস ঝিনাইদহ জেলায় যাতায়াত করে। ঝিনাইদহ জেলা সদর থেকে বাস বা সিএনজিতে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শৈলকুপা শাহী মসজিদ যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন

ঝিনাইদহ শহরে হোটেল রাতুল, হোটেল রেডিয়েশন, হোটেল জামান, নয়ন হোটেল, হোটেল ড্রিম ইন ও ক্ষণিকা রেস্ট হাউজ সহ বেশ কয়েকটি হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে।

কোথায় খাবেন

ঝিনাইদহের পায়রা চত্বরের কাছে ক্যাফে কাশফুল, কস্তুরি হোটেল, অজয় কিচেন, লিজা ফাস্ট ফুড, ইং কিং চাইনিজ, রূপসী বাংলা রেস্তোরা, সুইট হোটেল ও আহার রেস্তোরায় বিভিন্ন ধরণের খাবার খেতে পারবেন।

ঝিনাইদহের দর্শনীয় স্থান

ঝিনাইদহের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে বারোবাজার, নলডাঙ্গা রাজবাড়ী রিসোর্ট, মিয়ার দালান ও জোহান ড্রিম ভ্যালী পার্ক প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

ফিচার ইমেজ: হাসিব মাহবুব

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে

ম্যাপে শৈলকুপা শাহী মসজিদ

শেয়ার করুন সবার সাথে

ভ্রমণ গাইড টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ পাতায় যোগাযোগ করুন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ গাইড দায়ী থাকবে না।