কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলায় পাহাড় ও সমতলের সমন্বয়ে ঐতিহ্যবাহী রামু রাবার বাগান (Ramu Rubber Garden) গড়ে তোলা হয়েছে। ১৯৬০-৬১ সালে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহায়তায় অনাবাদি জমি গবেষণার মাধ্যমে রামুতে রাবার চাষাবাদ শুরু করা হয়। ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়, টিলা ও বিস্তৃত সমতল পাহাড়ের মাঝে ২,৬৮২ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত রামু রাবার বাগানের চারপাশে রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি।

শুরুর দিকে বাগানে ৫৮,০০০টি উৎপাদনক্ষম রাবার গাছ থাকলেও বর্তমানে প্রায় ১,৪০,০০০ টি গাছ রয়েছে। একটি রাবার গাছ ২৫ বছর পর্যন্ত রাবার কষ উৎপাদন করতে পারে এবং ৩২-৩৩ বছর বয়সে গাছগুলো অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদন ক্ষমতা হারায়। রাবার বাগানের এসব গাছ থেকে বছরে প্রায় আড়াই লাখ কেজি রাবার উৎপাদিত হয়।

বর্তমানে এই বাগানটি দেশের একটি অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক রাবার বাগান ও রাবারের উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখতে রামু বাগানে ঘুরতে আসেন। রামু রাবার বাগানের খোলামেলা পরিবেশ পিকনিক স্পট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

কিভাবে যাবেন

রামু রাবার বাগান যেতে হলে প্রথমে কক্সবাজার আসতে হবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে সায়দাবাদ, গাবতলী, মহাখালী, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিল থেকে সোহাগ, ঈগল, গ্রীন লাইন ও হানিফ পরিবহণের বাস আছে। এছাড়া রেলপথে চট্টগ্রাম হয়েও কক্সবাজার যেতে পারবেন।

কক্সবাজার (Cox’s Bazar) থেকে সিএনজি, অটোরিকশা বা ব্যাটারি চালিত টমটমে রামুর রাবার বাগান যাওয়া যায়। রামু চৌমহনী ষ্টেশন থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার উত্তরে চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে রামু রাবার বাগানের অবস্থান।  

কোথায় থাকবেন

রামু রাবার বাগান কর্তৃপক্ষের একটি দৃষ্টিনন্দন রেস্ট হাউজ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে এই রেস্ট হাউজে থাকার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারে অবস্থিত অসংখ্য হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

রামু উপজেলায় খাওয়ার জন্য মধ্যম মানের বেশকিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে। তবে কক্সবাজার থেকে রামু কাছাকাছি হবার কারণে কক্সবাজারে খাওয়াই ভালো।

আরও পড়ুনঃ কক্সবাজার ভ্রমণ গাইড

কিছু ভ্রমণ পরামর্শ

  • সাধারণত শীতকালে রাবার কষ উৎপাদন বেশী হয়। সেই হিসেবে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাস কষ আরোহণের উৎকৃষ্ট সময়। এই সময় রাবার বাগানে ঘুরতে গেলে ভালো লাগবে।
  • বর্ষাকালে কষের উৎপাদন কমে যায় এবং গ্রীষ্মকাল থেকে কষের উৎপাদন অল্প পরিমাণে বাড়তে থাকে। তাই রামু বাগানে ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই দুটি সময় এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
  • বাগানে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোন বিধি-নিষেধ নেই তবে রাবার কষ প্রক্রিয়াজাতকরণ দেখার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কারখানায় ঢুকতে পারবেন।
  • রাবার প্রক্রিয়াজাতকরন দেখার সময় উত্তপ্ত চুল্লির কাছে যাবেন না। চুল্লিতে সবসময়ই আগুন থাকে, এই ক্ষেত্রে খুব সাবধানে থাকবেন।
  • রামু বাগানের ভিতরে কোন দাহ্য পদার্থ যেমনঃ দিয়াশলাই, বিড়ি-সিগারেট এই ধরণের কোন কিছু নিবেন না। কারণ শীত ও বর্ষাকালে প্রকৃতির শুষ্কতার কারণে বাগানে অঘটন ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
  • বাগানের ভিতরে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না।
  • যেকোন রেস্তোরাঁয় খেতে বসার আগে দাম ও খাবারের মেনু চেক করে নিবেন, অনেক রেস্তোরাঁতেই ঠকে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

কক্সবাজার জেলার দর্শনীয় স্থান

কক্সবাজারের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সমুদ্র সৈকত, সেন্টমার্টিন, মহেশখালী, ইনানী সমুদ্র সৈকত, হিমছড়ি, ছেড়া দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপ, রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড, শাহপরীর দ্বীপ, লামাপাড়া খিয়াং, মাথিনের কূপ, শামলাপুর সমুদ্র সৈকত, আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, কুতুবদিয়া দ্বীপ, দরিয়া নগর, মেরিন ড্রাইভ রোড ও রামু বৌদ্ধ বিহার অন্যতম।

ফিচার ইমেজ: সৈয়দ সাজেদুল ইসলাম

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে

ম্যাপে রামু রাবার বাগান

শেয়ার করুন সবার সাথে

ভ্রমণ গাইড টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ পাতায় যোগাযোগ করুন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ গাইড দায়ী থাকবে না।