বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম বিহার রাজবন বিহার (Rajban Bihar) রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত। রাঙ্গামাটির দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হলো এই রাজবন বিহার। চিন্তাপ্রচারক ও ধর্ম-দার্শনিক বৌদ্ধধর্মীয় নেতা শ্রদ্ধেয় সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তে ১৯৭৭ সালে স্থায়ভাবে বসবাসের জন্যে রাঙ্গামাটিতে আসেন। বনভান্ত ও তাঁর শিষ্যদের বসবাসের জন্যে এই বিহারটি নির্মান করা হয়। বৌদ্ধদের জন্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এই বিহার বর্তমানে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ তীর্থস্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে। শুধু বৌদ্ধ ধর্মাম্বলীদের জন্যে নয় পার্বত্য অঞ্চলের এই ধর্মজ্ঞানচর্চাকেন্দ্রটি দুনিয়ার সব প্রকৃতিপ্রেমী, সৌন্দর্যঘনিষ্ট ও জ্ঞানসাধক মানুষের জন্যেই। ভ্রমণে এই বিহার ঘুরে দেখার আনন্দের সাথে খুব সহজেই যুক্ত হবে জানার নতুন ভুবন। সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময়ের সাথে মিলবে ধর্মচিন্তা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বোধের সুযোগ।

বিহারটিতে রয়েছে একটি সুরম্য উপাসনা বিহার, আধুনিক স্থাপত্য নকশায় নির্মিত দেশনালয়, বনভন্তের আবাসিক কুঠির ও বিশ্রামাগার, ভিক্ষু-শ্রামণদের আবাসিক ভবন, সুবৃহৎ অতিথিশালা, চংক্রমণঘর, সীমাঘর (ঘ্যাংঘর), অনুষ্ঠানমঞ্চ, সপ্ততলাবিশিষ্ট স্বর্গঘর, ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, অনেকগুলো ভাবনা কুটির, রন্ধনশালা, বনভন্তে ও ভিক্ষুসঙ্ঘের ভোজনালয়, নিজস্ব লাইব্রেরি ও প্রেস। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য পুরো বিহারের চতুর্দিকে রয়েছে সীমানা প্রাচীর।

রাজবন বিহার একটি ধর্মীয় স্থাপনা। নানা রকম আপত্তিকর ভঙ্গিমায় ছবি তোলা, ভিডিও করা, ঘোরাঘুরি, চিৎকার, উচ্চশব্দ বা হৈচৈ করবেন না। পর্যটকদের বিহার চত্ত্বরে টুপি মাথায় প্রবেশ এবং বিনা অনুমতিতে কোথাও প্রবেশ ও ছবি/ভিডিও নিষেধ।

যাওয়ার উপায়

রাজবন বিহার ঘুরতে গেলে আপনাকে প্রথমে রাঙ্গামাটি জেলা শহরে আসতে হবে। রাঙ্গামাটি শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে রাজবন বিহার অবস্থিত।

ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি

ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে রাঙ্গামাটি যাবার বেশ কিছু বাস সার্ভিস আছে। বাসগুলো সাধারণত সকাল ৮ টা থেকে ৯ টা এবং রাত ৮ টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১১ টার মধ্যে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ে। ঢাকা-রাঙ্গামাটি পথে নন এসি বাসের মধ্যে শামলি, ইউনিক, হানিফ ও এস আলম পরিবহনের বাস চলাচল করে। নন এসি বাস ভাড়া ৭৫০-৮০০ টাকা। এসি বাসের মধ্যে সেন্টমার্টিন হুন্দাই রবি এক্সপ্রেস, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী বাসের ভাড়া ১০০০-১৬০০ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি

চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন মোড় থেকে বিভিন্ন পরিবহণের লোকাল ও গেইটলক/ডাইরেক্ট বাস পাওয়া যায়। ভাড়া তুলনামূলক বেশি হলেও গেইটলক বা ডাইরেক্ট বাসে উঠলে সময় কম লাগে। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সরাসরি বাস ১২০-১৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। বাসগুলো শহরের রিজার্ভ বাজার নামক স্থান পর্যন্ত যায়। এছাড়া চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে রাঙ্গামাটিতে বাস চলাচল করে।

রাঙ্গামাটি থেকে রাজবন বিহার

শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের রাজবন বিহার স্থানীয় অটোরিক্মা কিংবা প্রাইভেট গাড়ি কিংবা অন্য কোন মটরযানে যেতে পারবেন। নৌপথে বিভিন্ন ধরণের বোটে করেও যেতে পারবেন।

রাঙ্গামাটি থাকার ব্যবস্থা

রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন মানের গেষ্ট হাউজ ও আবাসিক হোটেল রয়েছে। রাঙ্গামাটি শহরের পুরাতন বাস স্ট্যন্ড ও রিজার্ভ বাজার এলাকায় লেকের কাছাকাছি হোটেল ঠিক করার চেষ্টা করুন। তাহলে হোটেল থেকে কাপ্তাই লেকের পরিবেশ ও শান্ত বাতাস উপভোগ করতে পারবেন। রাঙ্গামাটির উল্লেখযোগ্য কিছু আবাসিক হোটেলের নামঃ

  • হোটেল গ্রিন ক্যাসেল : রিজার্ভ বাজারে অবস্থিত এ হোটেলে নন-এসি সিঙ্গেল বেড, ডাবল বেড ও ত্রিপল বেডের রুমের ভাড়া যথাক্রমে ৮০০, ১০০০ ও ১২০০ টাকা। এসি কাপল বেড রুম পাবেন ১৬০০ টাকায় ও এসি ত্রিপল বেড রুম পাবেন ২০০০ টাকাইয়। যোগাযোগ: 01726-511532, 01815-459146
  • পর্যটন মোটেল : রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত ব্রিজের পাশে অবস্থিত এ হোটেলটিতে নন-এসি ডাবল বেডের রুম পেতে ১০০০-১২০০ টাকা গুনতে হবে। আর এসি ডাবল বেড পাবেন ১৫০০-১৮০০ টাকায়। যোগাযোগঃ ০৩৫১-৬৩১২৬
  • রংধনু গেস্ট হাউজ : এই গেস্ট হাউজে ফ্যামিলি বেড বা কাপল বেড ভাড়া নিতে খরচ পড়বে যথাক্রমে ৬৫০ ও ৫০০ টাকা। যোগাযোগ: 01816-712622, 01712-392430
  • হোটেল সুফিয়া : ফিসারী ঘাট, কাঁঠালতলী। যোগাযোগ: 01553-409149
  • হোটেল আল-মোবা : নতুন বাস স্টেশন, রিজার্ভ বাজার। যোগাযোগ: 01811-911158

রাঙ্গামাটি জেলার জনপ্রিয় সকল হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্ট হাউজের তথ্য জানতে পড়ুন রাঙ্গামাটি হোটেল ও রিসোর্ট গাইড

খাওয়া দাওয়া

রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন মানের অসংখ্য খাবার রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সাধ্যের মধ্যে যেকোন রেস্টুরেন্টে আপনার প্রতিবেলার খাবার সেরে ফেলতে পারেন। রেস্টুরেন্টে পাবেন স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী সব খাবার। ভিন্ন স্বাদের এইসব খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না। বোটে করে গিয়ে খেতে পারেন সুনামধন্য পেদা টিং টিং এ।

রাঙ্গামাটির আশেপাশে দর্শনীয় স্থান

সাধারণত পর্যটকগন রাঙ্গামাটির আরও বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করে থাকেন। তার মধ্যে জনপ্রিয় স্থান গুলো হলো শুভলং ঝর্ণা, কাপ্তাই লেক, ঝুলন্ত ব্রিজ, উপজাতীয় জাদুঘর, ঝুম রেস্তোরা, ঐতিহ্যবাহী চাকমা রাজবাড়ি, পেদা টিং টিং, নৌ-বাহিনীর পিকনিক স্পট ইত্যাদি।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

  • বিহারের পবিত্রতা নষ্ট হয় এমন কিছু করবেন না।
  • বিনা অনুমতিতে কোথাও প্রবেশ করবেন না।
  • বিনা অনুমতিতে ছবি বা ভিডিও করবেন না।
  • বিকেল ৫টার পর ভিতরে যাবার অনুমতি দেওয়া হয় না।
  • একসাথে দলগত ভাবে গেলে খরচ কমে যাবে।
  • অফসিজনে ও ছুটির দিন ব্যাতিত গেলে খরচ কম হবে।
  • লেকের কাছাকাছি কোন হোটেল ঠিক করার চেষ্টা করুন।
  • একদিনেই রাঙ্গামাটির কমন স্পট গুলো ঘুরে বেড়ানো যায়।
  • পরিবেশে ও জীববৈচিত্রের ক্ষতি হয় দয়া করে এমন কিছু করবেন না।

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে

ম্যাপে রাজবন বিহার

শেয়ার করুন সবার সাথে

ভ্রমণ গাইড টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ পাতায় যোগাযোগ করুন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ গাইড দায়ী থাকবে না।