দলবেঁধে নদীতে মাছ ধরা গ্রাম বাংলার প্রাচীন এক ঐতিহ্য। শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ প্রতি বছরের আশ্বিন মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং এবং বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস, দশঘর, দৌলতপুর, মাদাই প্রভৃতি বিল ও হাওরে পলো বাইছ উৎসব (Polo Bawa Utshob) আয়োজন করা হয়। বাঁশ দিয়ে তৈরি এক বিশেষ ধরণের ঝাঁপি বা মাছ ধরার ফাঁদকে “পলো” বলা হয়। গ্রামের মানুষ মাছ শিকার ছাড়াও বিভিন্ন দৈনন্দিন কাজে পলো ব্যবহার করে থাকেন। সারাবছর ধরে শৌখিন শিকারিরা পলো বাইছ উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন।

শীত মৌসুমে হাওরের পানি কমতে শুরু করলে আশে পাশের সকল গ্রামের মুরব্বীদের দ্বারা পলো বাইছ উৎসবের দিন ঠিক করা হয়। নির্ধারিত দিনে প্রায় কয়েক হাজার লোক পলো, জাল, দড়ি সহ মাছ ধরার বিভিন্ন দেশীয় উপকরণ নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে বড়আন বিলে হাজির হয়। আর মাছ ধরা শেষে হৈ-হুল্লোড় করে ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া গ্রামবাসীদের আরেকটি আনন্দের বিষয়। তখন গ্রামগুলোতে উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সিলেটগামী হানিফ, গ্রিন লাইন, এনা, অগ্রদূত পরিবহন কিংবা দিগন্ত এক্সপ্রেসের বাসে হবিগঞ্জ যেতে পারবেন। আর ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পাহারিকা, উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত প কালনি এক্সপ্রেস ট্রেনে হবিগঞ্জ আসা যায়। হবিগঞ্জ থেকে লোকাল বাস, সিএনজি ও অটোরিকশায় বানিয়াচং বা বিশ্বনাথ উপজেলায় যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন

হবিগঞ্জে হোটেল রোজ গার্ডেন, আলিফ হোটেল, হোটেল সোনার তরী, হোটেল বনানী, হোটেল আমাদ-এর মতো বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। আবার অগ্রিম বুকিং দিয়ে বাহুবল উপজেলার দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টের মতো বিলাসবহুল রিসোর্টে থাকতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

বানিয়াচং উপজেলায় সাধারণ মানের খাবারের রেস্তোরাঁ আছে। আর হবিগঞ্জ জেলা শহরের আড্ডা প্লাটিনাম, রয়েল ফুড, হাংগ্রি বা নূরানি রেস্টুরেন্টে ভাল মানের খাবার পাওয়া যায়।

পলো বাইস উৎসব দেখার ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ

  • বিগত কিছু বছর ধরে ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ পলো বাইছ উৎসব আয়োজন করা হয়। আবার অনেক সময় মার্চ মাসেও এই উৎসব হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করে গেলে সুবিধা হবে।
  • একক ভাবে না গিয়ে কয়েকজন মিলে গেলে ভালভাবে উৎসব উপভোগ করতে পারবেন।
  • যেহেতু সকাল থেকেই এই উৎসব শুরু হয়ে যায় তাই নির্দিষ্ট দিনে না গিয়ে আগের দিন রাতে গন্তব্যস্থলে অবস্থান করতে পারেন।

হবিগঞ্জ জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

হবিগঞ্জের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে শংকরপাশা শাহী মসজিদ, বিথাঙ্গল বড় আখড়া, গ্রীনল্যান্ড পার্ক ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান অন্যতম।

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে

ম্যাপে পলো বাইছ উৎসব

শেয়ার করুন সবার সাথে

ভ্রমণ গাইড টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ পাতায় যোগাযোগ করুন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ গাইড দায়ী থাকবে না।