জাতীয় স্মৃতিসৌধ (National Martyrs Memorial) নির্মিত হয়েছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সকল বীর শহীদদের স্মৃতির স্মরণে। ঢাকা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে ৪৪ হেক্টর জায়গা নিয়ে সাভার উপজেলায় এই স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্স স্থাপন করা হয়েছে। স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেনের নকশায় ১৯৮২ সালের শেষের দিকে স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূলকাঠামো সাত জোড়া ত্রিভূজাকৃতির দেয়াল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। দেয়ালগুলো ক্রমান্বয়ে ছোট থেকে বড় রূপে সাজানো হয়েছে। সর্বমাঝের দেয়ালটি দৈর্ঘ্যে ছোট হলেও উচ্চতায় অন্য দেয়াল থেকে সবচেয়ে বেশি উঁচু। স্মৃতিসৌধের সর্বোচ্চ বিন্দুর উচ্চতা ১৫০ ফুট। জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামো কংক্রিটের তৈরী। সৌধের অন্যান্য সব স্থাপনায় লাল ইটের ব্যবহার করা হয়েছে যা লাল রক্তে রঞ্জিত জমিতে স্বাধীনতার উপাখ্যান রূপে প্রকাশ পাচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে স্মৃতিসৌধটি দেখতে একেক রকম লাগে, যা এই সৌধের সতন্ত্রতা নির্দেশ করে।
স্মৃতিসৌধে সাতটি স্তম্ভ কেন?
স্মৃতিসৌধটি সাত জোড়া ত্রিভুজ নিয়ে গঠিত। জাতীয় স্মৃতিসৌধের সাত জোড়া দেয়াল স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি ভিন্ন পর্যায় নির্দেশ করে। পর্যায়গুলো হলো:
- ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন
- ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন
- ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন
- ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন
- ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন
- ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান
- ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ
জাতীয় স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সের মধ্যে আছে কৃত্রিম জলাশয়, বাগান এবং ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর নির্মমতার নিদর্শন ঐতিহাসিক বধ্যভূমি ও গণকবর। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তি সময়ে এই বধ্যভূমি ও গণকবর আবিস্কৃত হয় যা স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামোর সাথেই যুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধের সামনে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলায় পূর্ণ একটি জলাশয় রয়েছে। এই জলাশয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিফলন অপূর্ব দৃশ্যের অবতারণ করে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রবেশের জন্য কোনরকম অর্থ পরিশোধ করতে হয় না। দর্শনার্থীদের পরিদর্শনের জন্য প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জাতীয় স্মৃতিসৌধ খোলা থাকে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে স্মৃতিসৌধে যাওয়ার জন্যে বিআরটিসির বাস সার্ভিস রয়েছে। বিআরটিসির বাসে দিয়ে ঢাকার মতিঝিল, গুলিস্তান, শাহবাগ, ফার্মগেট, আসাদগেট, শ্যামলী, গাবতলী থেকে স্মৃতিসৌধ দেখতে যেতে পরবেন। মিরপুর ১২ থেকে তিতাস পরিবহন মিরপুর ১০, মিরপুর ১, গাবতলী হয়ে স্মৃতিসৌধের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়াও মতিঝিল – গুলিস্তান থেকে বেশ কিছু বাসে করে নবীনগর পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে সহজে স্মৃতিসৌধ দেখতে যেতে পারবেন।