দোহার উপজেলার মৈনট ঘাট (Moinot Ghat Dhaka) কে ডাকা হয় মিনি কক্সবাজার নামে। ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে সোজা একটি রাস্তা এসে মিলেছে দোহারের মৈনট ঘাটে। পদ্মার এক পাড়ে দোহার আর অপর পাড়ে ফরিদপুর। মৈনট ঘাট থেকে মানুষ পদ্মা পাড় হয়ে ফরিদপুরের গোপালপুর যায়। ঘাটের পূর্ব পাশে বিশাল চর মানুষকে সাগরের বেলাভূমির কথা মনে করিয়ে দেয় আর সামনের বিস্তীর্ণ পদ্মা হয়ে যায় সাগর। আর চাইলে এখান থেকে নৌকায় করে পদ্মা নদীতে ঘুরে বেড়ানো যায় কিংবা পাড় ধরে হাটা যায় ইচ্ছে মত।
কি দেখবেন
ঢাকার কাছে হওয়ার এবং দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা যায় বিধায় মৈনট ঘাট ভ্রমণ পাগল মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্পিড বোটে পদ্মার উপর ঘুরে বেড়াতে পারেন। মোটামুটি সাইজের একটা ট্রলার প্রতি ঘন্টার জন্য ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিতে পারে। চাইলে পদ্মার পানিতে গা ভাসাতে পারেন আর সন্ধ্যার অপূর্ব সূর্যাস্থ তো রয়েছেই।
মৈনট ঘাট যাবার উপায়
ঢাকার গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের সামনে দিয়ে দোহারগামী অনেক বাস যায় তবে সব বাস দোহারের মৈনট ঘাট পর্যন্ত যায় না। শুধুমাত্র যমুনা ডিলাক্স পরিবহণের বাসে করে দোহারের মৈনট ঘাট পর্যন্ত যাওয়া যায়। তাই নিশ্চিত হতে বাসে উঠার আগে জেনে নিন বাসটি কি মৈনট ঘাট যাবে কিনা। গুলিস্তান থেকে মৈনট ঘাট যেতে ৯০ টাকা ভাড়া লাগে। মাত্র দুই ঘন্টা সময় লাগে মৈনট ঘাট পৌঁছাতে। মৈনট ঘাট থেকে ঢাকাগামী শেষ বাস সন্ধ্যা ৬ টায় ছেড়ে আসে। তাই যেখানেই থাকুন না কেন বাসে আসতে চাইলে ৬ টার আগেই বাসের কাছে উপস্থিত হোন।
অথবা গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের সামনে থেকে এন মল্লিক পরিবহণে আসতে চাইলে আপনাকে নবাবগঞ্জের মাঝিরকান্দা নামক স্থানে নামতে হবে। ভাড়া লাগবে ৭০ টাকা। এরপর মাঝিরকান্দা থেকে ১৫ টাকা ভাড়াতে অটো করে দোহারের বাঁশতলায় আসতে হবে। বাঁশতলা থেকে কার্তিকপুর আসতে অটো ভাড়া লাগবে ১৫ টাকা। কার্তিকপুর বাজারে মৈনট ঘাট যাবার অটো ভাড়া লাগবে ১০ টাকা, আর রিক্সা ভাড়া নিবে ২০ টাকা।
পথে চাইলে লক্ষ্মীপ্রসাদ স্থানে নেমে পোদ্দারবাড়ি দেখে নিতে পারেন। এছাড়া জজবাড়ি, উকিলবাড়ি, কোকিলপ্যারি দালান, আন্ধার কোঠা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখে যেতে আপনাকে মাঝিরকান্দার আগে কলাকোপা নামক স্থানে নামতে হবে।
মোহাম্মাদপুর বাস স্টান্ড দিয়ে বসিলা তিন রাস্তা মোড়ে গেলে সেখান থেকে মৈনট ঘাট যাবার সিএনজি পাওয়া যায়। সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে শুধুমাত্র যেতে ১০০০ টাকার মত লাগে। দরাদরি করলে কম টাকায় সিএনজি পাওয়া যেতে পারে, আর এক সিএনজিতে ৪ জন বসা যায়।
কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য মৈনট ঘাটের আশপাশে কোনো হোটেল, রিসোর্ট কিংবা বোর্ডিং এখনো গড়ে উঠেনি। আর ঢাকার কাছে হওয়ায় মৈনট ঘাট থেকে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসাই ভালো।
কি খাবেন
মৈনট ঘাটের পাশে দুইটি খাবার হোটেল আছে। এগুলি মূলত ভাতের হোটেল তাই দুপুরবেলা এখানে পদ্মার মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে দেখতে পারেন। ইলিশ খেতে চাইলে ৬০ থেকে ৯০ টাকায় ছোট সাইজের ইলিশ পাবেন। এছাড়া খাবার মত তেমন কোন ভালো ব্যবস্থা নেই। ইন্সট্যান্ট বানানো পাপর ভাজা টেস্ট করে দেখতে পারেন। আর পাবেন ফুচকা।
অবশ্যই কার্তিকপুরের রণজিৎ ও নিরঞ্জন মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের নামকরা মিষ্টি খেতে ভুল করবেন না। দেখে নিন কার্তিকপুরের মিষ্টির দরদাম। সাধারণ রসগোল্লা ১৫০ টাকা কেজি। ছানার রসগোল্লা ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজি। চমচম ও কালোজাম ১৬০ টাকা কেজি। বালুশা ১৪০ টাকা কেজি। জিলাপি ১০০ টাকা কেজি। রসমালাই ৩০০ টাকা কেজি। দই ১৪০ টাকা কেজি।
ভ্রমণ সতর্কতা
- এখানে স্রোতের টান প্রচুর তাই সাঁতার না জানলে গোসল করার সময় বেশি পানিতে যাবেন না।
- মনে রাখবেন এটা কোন সমদ্র সৈকত নয়, কিছু কিছু জায়গায় অনেক গভীর। পানিতে নামার আশেপাশের মানুষদের জিজ্ঞেস করে নিন।
- সিগারেট অথবা খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল অথবা কোন প্রকার ময়লা যেখানে সেখানে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
- দোকানি, নৌকাচালক সবার সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।