মিঠামইন (Mithamoin) কিশোরগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। মিঠামইন এর উত্তরে ইটনা ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে অষ্টগ্রাম উপজেলা, পূর্বে বানিয়াচং ও অষ্টগ্রাম, পশ্চিমে করিমগঞ্জ ও নিকলী উপজেলা। হাওর এলাকা হলেও এটি একটি প্রাচীন জনপদ। মিঠামইনকে অন্যান্য নামেও ডাকা হয় তার মধ্যে মিঠামন, মিটামইন বা মিটামন বলে উচ্চারণ করে থাকেন। নামের উৎস নিয়ে যে মত আছে তার একটি হলো গ্রামের পাশ্ববর্তী এলাকায় এক সময় প্রচুর মিষ্টি বা মিঠা রসের খাগড়া গাছের বন ছিল। এই খাগড়ার বন থেকে মিঠাবন এবং সেখান থেকে মিঠামন বা মিঠামইন হয়েছে। শহর থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ও কম সময়ে ঘুরে আসা যায় সেই জন্যে মিঠামইন হাওর এলাকা ভ্রমণ প্রিয় মানুষের জনসমাগম বেশি হয়ে থাকে।
মিঠামইন হাওরে যাবার উপায়
আপনি যদি শুধু মিঠামইন হাওরের কথা চিন্তা করে আসেন তাহলে প্রথমে আপনাকে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে অথবা ট্রেনে করে কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকা থেকে প্রতিদিন সকাল ৭.১৫ মিনিটে এগারসিন্দুর প্রভাতি (বুধবার বন্ধ) ছাড়ে কিশোরগন্জের উদ্দ্যেশ্যে। ৩-৪ঘন্টার এই ট্রেন ভ্রমণ করতে খরচ হবে শ্রেণী ভেদে ১৫০-২০০ টাকা। বাসে আসতে চাইলে মহাখালি বাস স্ট্যান্ড থেকে অনন্যা পরিবহণ ও অনন্যা সুপার বাসে এবং সায়েদাবাদ থেকে আসতে চাইলে অনন্যা সুপার ও যাতায়াত বাসে করে সরাসরি কিশোরগঞ্জ সদরে আসা যায়। বাস ভাড়া ২৭০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন বা বাস স্টেশন থেকে থেকে রিক্সা/ইজিবাইক দিয়ে একরামপুর বাস/সিএনজি স্ট্যান্ড, তারপর লোকাল সিএনজি/অটো অথবা রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে বালিখলা ঘাট। সেখান থেকে ঘন্টা অথবা সারাদিনের জন্যে ছোট ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করে মিঠামইন হাওরের চারপাশ ঘুরে দেখা যাবে। ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া ঘন্টাপ্রতি ২০০-৪০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে, যা দরদামের উপর নির্ভর করে। বালিখলা ঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকায় মিঠামইন যেতে প্রায় এক ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত লাগে। এছাড়া বালিখলা ঘাট হতে মিটামইন যাওয়ার লোকাল নৌকা সার্ভিস রয়েছে।
মিঠামইনে দেখার মত স্থান
মিঠামইনের হাওরে ভ্রমণ ছাড়াও দেখার মত আছে ঐতিহ্যবাহী নানা স্থাপনা, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
মালিকের দরগা
মিঠামইন থেকে ট্রলার যোগে ঘাগড়া। সেখান থেকে আবার ট্রলার যোগে মালিকের দরগা যেতে হয়। আবার আসার সময় মালিকের দরগাহ থেকে ট্রলার দিয়ে ঘাগড়া। ঘাগড়া থেকে আবার ট্রলার যোগে মিঠামইনের উদ্দ্যেশে রওনা দিতে হয়। সময় লাগে ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট। শুকনো মৌসুমে মিঠামইন থেকে টেম্পু দিয়ে ঘাগড়া অথবা মটর সাইকেলে মালিকের দরগা যাওয়া যায়।
দিল্লির আখড়া
কিশোরগঞ্জ থেকে বাস বা সিএনজি করে চামড়া ঘাট। চামড়া ঘাট থেকে ট্রলার দিয়ে যেতে হয় দিল্লির আখড়ায়।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়ি
মিটামইনের কামালপুর গ্রামে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়িতে কাটিয়ে আসতে পারেন কিছুটা সময়।
এছাড়াও আছে অনেক বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী মসজিদ। মিঠামইন উপজেলার গায়ের মহিলাদের হাতে তৈরি বিভিন্ন হস্তশিল্প সামগ্রি এখানকার ঐতিহ্য বহন করছে চলছে। এ ছাড়াও এ অঞ্চলে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী অনেক খেলাধুলা, যেমন, নৌকা বাইচ, লাঠি খেলা ইত্যাদি। নৌকা বাইচ হবে এমন একটা সময়ে গেলে হয়তো এই বাংলার ভিন্ন এক ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় হবে আপনার। মিঠামইন বাজারের কাঠমহাল এখানকার ঐতিহ্যের আরেক নিদর্শন।
থাকার ব্যবস্থা
মিঠামইনে থাকার জন্যে সবচেয়ে ভালো জায়গা প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট। তবে খরচ অনেক বেশি। এছাড়া মিঠামইন বাজারে অবস্থিত হোটেল আল-কামাল (০১৬৮৯-০৯০১০১) ও হোটেল সিকদার আবাসিকে (০১৭৫৩-৮০৪৫৪৫) মান অনুযায়ী ৫০০ থেকে ১২০০ টাকায় রুম ভাড়া করতে পারবেন। উপজেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে রাত্রিযাপনের সুযোগ রয়েছে।
কি খাবেন
মিটামইন বাজারের স্থানীয় খাবার হোটেলে হাওরের বিভিন্ন তাজা মাছের পদ পাবেন। উল্লেখযোগ্য খাবার হোটেলের মধ্যে রয়েছে কাচা লংকা, সেলিম রেস্টুরেন্ট ও হোটেল চাঁনপুর।
কিশোরগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান
মিঠামইন ছাড়াও কিশোরগঞ্জ জেলায় রয়েছে নিকলী হাওর, ইটনা হাওর, শহরের নরসুন্দা লেক, বাংলার প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর মন্দির, মানব বাবুর জমিদার বাড়ি সহ আরও অনেক দর্শনীয় স্থান। হাতে সময় আর সুযোগ বুঝে পরিকল্পণা করে ফেলুন আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা।
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।