পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে মহালছরি উপজেলার নুনছড়িতে দেবতার আশীর্বাদস্বরূপ পাহাড়ের চূড়ায় প্রাকৃতিক হ্রদ মাতাই পুখিরি (Matai Pukhiri) অবস্থিত। মাতাই অর্থ দেবতা এবং পুখিরি অর্থ পুকুর। আর তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই হ্রদটি পর্যটকদের কাছে দেবতার পুকুর হিসেবে সুপরিচিত। মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালা মুখ থেকে এ হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০০ ফুট উচ্চতায় সাড়ে ৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত দেবতা পুকুরের দৈর্ঘ্য দেড় হাজার ফুট এবং প্রস্থ ছয়শ ফুট। পুকুরের চারদিকে আছে ঘন সবুজ অরণ্য ও সুবিন্যস্ত পর্বতশ্রেণি। দেবতার পুকুর হ্রদের পানি কখনো সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায় না এবং বর্ষাকালে এটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে।

দেবতার পুকুর বা লেক সৃষ্টির কারণ হিসাবে বেশকিছু লোককথা প্রচলিত আছে। এক স্থানীয় জুম চাষী স্বপ্নে দেবতার নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে জুম চাষ চালিয়ে যান। কিছুদিনের মধ্যে এক ভুমিকম্পের পর স্থানীয়রা দেখতে পায় জুম পাহাড়ের জায়গাটিতে একটি জলাশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া প্রচলিত আছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের জলের চাহিদা পূরণের জন্য স্বয়ং জল দেবতা এই পুকুর খনন করেছেন। আবার এই জলাশয়ের গভীরতা নিয়ে প্রচলিত লোককথা থেকে জানা যায়, রেবতি রঞ্জন নামের এক জনৈক হিন্দু ব্যক্তি বাঁশের ভেলায় চড়ে লেকের গভীরতা মাপার চেষ্টা করলে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরে আসেন।

আর এই অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বী, প্রকৃতি পূজারি ত্রিপুরা জনগোষ্টির বিশ্বাস, দেবতা পুকুরের তলায় গুপ্তধন লুকায়িত রয়েছে, যা স্বয়ং দেবতাদের পাহারায় রয়েছে এবং হ্রদের পাড়ে গিয়ে দেবতার কাছে কিছু চাইলে তা পাওয়া যায়। প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে এখানে তীর্থ মেলা এবং প্রকৃতি পূজারি ত্রিপুরাদের মহাযজ্ঞের আয়োজন করা হয়। পুণ্য লাভের আশায় দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ত্রিপুরাদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত দেবতার পুকুর আসেন।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, উত্তরা বা আরামবাগ থেকে সেন্টমার্টিন হুন্দাই, শান্তি, শ্যামলী, হানিফ, ইকোনো, রিলেক্স এবং ঈগল পরিবহনের বাসে খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়। খাগড়াছড়ি শহর থেকে জীপ বা চান্দের গাড়ীতে নুনছড়ি হয়ে খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি- রাঙ্গামাটি সড়কের কাছে নেমে প্রায় ১৮০০ টি সিঁড়ির ধাপ পেরিয়ে মাতাই পুখিরি যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

খাগড়াছড়িতে পর্যটন মোটেল, হোটেল ইকো ছড়ি ইন, শৈল সুবর্ন, হোটেল হিল টাচ, হোটেল মাউন্ট ইন, হোটেল নূর, গাংচিল আবাসিক ও অরণ্য বিলাস প্রভৃতি আবাসিক হোটেল রয়েছে।

কোথায় খাবেন

খাগড়াছড়ি হতে মাতাই পুখিরি যাওয়ার রাস্তায় এফএনএফ রেস্টুরেন্ট, ইসমাইল হোটেল, ব্যাম্বু শুট, হিল ফ্লেভারস, ফুডাং থাং, চাওমিন রেস্টুরেন্ট ও জুম স্পাইস ইত্যাদি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। আর খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর, বাস স্ট্যান্ড ও পান্থাই পাড়ায় অবস্থিত সিস্টেম রেস্তোরাঁ, পেডা টিং টিং, গাং সাবারং, পাজন ও চিম্বাল রেস্টুরেন্টের অনেক সুনাম রয়েছে। খাগড়াছড়ির জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে হাঁসের কালাভুনা, বাশকুড়ুল এবং ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ী খাবার অন্যতম।

খাগড়াছড়ির জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান

খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রিসাং ঝর্ণা, আলুটিলা গুহা, হাতিমাথা ও নিউজিল্যান্ড পাড়া উল্লেখযোগ্য।

ফিচার ইমেজ: কাউসার-ই-এলাহী

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে

ম্যাপে মাতাই পুখিরি

শেয়ার করুন সবার সাথে

ভ্রমণ গাইড টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ পাতায় যোগাযোগ করুন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ গাইড দায়ী থাকবে না।