মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত (Mandarbaria Sea Beach) সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের এক নয়নাভিরাম বেলাভূমি। হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর তীরের এক পাশে সুন্দরবন এবং অন্য পাশে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত এর অপূর্ব প্রকৃতি যেন নেশা ধরিয়ে দেয়। বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষের কাছে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত অজানা একটি স্থান। সাতক্ষীরা জেলার বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর নৌঘাট থেকে এই সৈকতের দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। সাতক্ষীরা থেকে নীলডুমুর পর্যন্ত গাড়ীতে এসে বাকি পথ ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা স্পীড বোটে করে যেতে হয়। সুন্দরবনের বুক চিরে বয়ে যাওয়া নদীগুলিই হচ্ছে ৭৫ কিলোমিটার যাত্রা পথের একমাত্র উৎস। তাই প্রায় ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মান্দারবাড়ীয়া সমুদ্র সৈকত শুধুমাত্র বিশেষ ভ্রমণকারীদের জন্য উপযুক্ত যারা কষ্ট স্বীকার করে বঙ্গোপসাগরের মায়াবী জলরাশির অবিশ্রান্ত গর্জন শুনতে রাজি আছেন।
নীলডুমুর ঘাট থেকে খোলপেটুয়া-কপোতাক্ষ নদের মোহনা দিয়ে অতিক্রম করে মান্দারবাড়িয়ায় যেতে কলাগাছিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, মালঞ্চ নদী বেয়ে যেতে হয়। যাত্রাপথে নদীর উভয়পাশে চিরসবুজ সুন্দরবনক মোহিত করবে। সাথে দেখা মিলবে হরিণ সহ নানা প্রজাতির প্রাণীর চলাচল এবং পানকৌড়ি, বালিহাস সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির উড়ে যাওয়ার দৃশ্য। এছাড়া নির্জন এই মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের বুকে হরিণ কিংবা বাঘের পায়ের ছাপ নিঃসন্দেহে ভ্রমণের উত্তেজনা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে।
ভ্রমণের সময়
শীত মৌসুম অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বুড়িগোয়ালিনির নীলডুমুর নৌঘাট থেকে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার ইঞ্জিন চালিত নৌকা, স্পিডবোট ও স্টিমার চলাচল করে। তাই মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের জন্য শীতকালই উত্তম।
মান্দারবাড়ী সমুদ্র সৈকত কিভাবে যাওয়া যায়
ঢাকা থেকে বাসে সাতক্ষীরা
ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার দূরত্ব ৩৪৩ কিলোমিটার। ঢাকার গাবতলী, নবীনগর, শ্যামলী, কল্যাণপুর এবং সাভার থেকে সাতক্ষীরা যাবার এসি এবং ননএসি বাস রয়েছে। এদের মধ্যে এসপি গোল্ডেন লাইন, এ কে ট্রাভেলস, গ্রীন লাইন, মামুন এন্টারপ্রাইজ, ঈগল পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস এবং শ্যামলী পরিবহন উল্লেখযোগ্য। মানভেদে এ সমস্ত বাসের টিকেটের জন্য ৬৫০ থেকে ১০০০ টাকা।
সাতক্ষীরা থাকে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত
সাতক্ষীরা সদর থেকে বুড়িগোয়ালীনির দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। বুড়িগোয়ালিনির নীলডুমুর নৌঘাট থেকে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার ইঞ্জিন চালিত নৌকা, স্টিমার, স্পিড বোট পাওয়া যায়। স্টিমার ও ইঞ্জিন চালিত নৌকায় সমুদ্র সৈকতে যেতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। স্পিড বোটে মান্দারবাড়িয়া যেতে ২ থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে।
কোথায় থাকবেন
সাতক্ষীরা রাত্রি যাপনের জন্য বেশকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে এদের মধ্যে হোটেল সংগ্রাম, হোটেল সম্রাট, হোটেল সীমান্ত, মোজাফ্ফর গার্ডেন, হোটেল মোহনা এবং হোটেল উত্তরা-তে ভালো সার্ভিস পাবেন।
কোথায় খাবেন
সাতক্ষীরা জেলা কুল, আম,ওল, মাছ এবং সুন্দরবনের খাঁটি মধুর জন্য বিখ্যাত। এছাড়া সাতক্ষীরা ঘোষ ডেইরীর সন্দেশ খেয়ে দেখতে পারেন, সন্দেশের স্বাদ অনেক দিন মুখে লেগে থাকবে।
সাতক্ষীরা জেলার দর্শনীয় স্থান
মান্দারবাড়ী সমুদ্র সৈকত ছাড়াও সাতক্ষীরায় ঘুরে দেখার মত বেশ কিছু সুন্দর স্থান রয়েছে। সময় নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন সুন্দরবন, জোড়া শিবমন্দির, মন্টু মিয়ার বাগান বাড়ী, সোনাবাড়িয়া মঠবাড়ি মন্দির, দেবহাটার বনবিবির বটগাছ, নলতা শরীফ এবং জাহাজমারী থেকে।
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।