মাগুরা সদর উপজেলা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ফটকি নদীর উত্তর তীরবর্তী টিলা গ্রামে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার নাম ভাতের ভিটা (Vater Vita)। ধারণা করা হয়, প্রায় ৩২১ খিস্টপূর্বে মৌর্য্য সাম্রাজ্যের তৃতীয় শতাব্দী থেকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়কাল পর্যন্ত টিলা গ্রামে একটি বৌদ্ধ সংঘ্যারাম প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। সেই সময় এই অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনা করার লক্ষ্যে একটি বিচারালয় ও অপরাধীদের সাজা দেওয়ার লক্ষ্যে টিলা গ্রামের পশ্চিমে একটি উঁচু জায়গা নির্মাণ করা হয়। স্থানীয়ভাবে এই স্থানটি ছোট টিলা বা ভাতের ভিটা নামে পরিচিতি পায়। বন্যায় সারাদেশের বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হলেও টিলা গ্রামটি কখনো প্লাবিত হয় না। তবে স্থানীয়দের মতে, আধ্যাত্মিক এক দরবেশ এই ভিটা নির্মাণ করেছেন এবং সেই কারণে স্থানটি একটি পুণ্যস্থান হিসেবে বিবেচিত।

ভাতের ভিটার নামকরণের পিছনেও একটি বহুল প্রচলিত জনশ্রুতি আছে। অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী এক দরবেশ ফটকি নদীর তীরে এসে থামেন এবং নামায পড়ার প্রয়োজনে এক রাতের মধ্যে এখানে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। নির্মাণ কাজের মাঝে খাবারের প্রয়োজনে ভাত রান্নার প্রস্তুতি নিলেও রান্না শেষ হবার আগেই রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে পাখ-পাখালির কূঞ্জনে চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠে। এই অবস্থায় মসজিদের কাজ অসমাপ্ত রেখেই দরবেশ চলে যান। সকালে সবাই দেখতে পায় অসমাপ্ত মসজিদ, রান্না করা ভাত এবং পাশেই ভাতের ফ্যান গড়িয়ে সৃষ্টি হওয়া পুকুর। সেই থেকে উঁচু এই টিলার নাম হয় ভাতের ভিটা। আর ভাতের ফ্যান গড়িয়ে একজায়গায় পুকুরের মত সৃষ্টি হয়েছে তাঁর নাম দেওয়া হয় ফ্যানঘ্যালী পুকুর।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে খননকালীন এই স্থান থেকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের একটি বৌদ্ধ সংঘ, ৪ ফুট লম্বা একটি হাত ও পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের মত বহুকক্ষবিশিষ্ট ছোট একটি ইমারতের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। পরবর্তীতে ভাতের ভিটায় একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় এবং স্থানীয়রা এখানে নিয়মিত নামায আদায় করে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স, জে আর পরিবহণ, মেহেরপুর ডিলাক্স, রয়েল পরিবহণ, হানিফ, সোহাগ ও ঈগল পরিবহনে মাগুরা যেতে পারবেন। মাগুরা জেলা থেকে যশোর-মাগুরা সড়ক হয়ে বাস ও ভ্যানে ভাতের ভিটায় পৌঁছাতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

মাগুরাতে রাত্রি যাপনের জন্য হোটেল ঈগল, হোটেল চলন্তিকা, হোটেল মণ্ডল আবাসিক, হোটেল চৌরঙ্গী, হোটেল সৈকতের মতো মধ্যম মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।

কোথায় খাবেন

ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কের কাছে সাধারণ মানের রেস্তোরাঁ রয়েছে।

মাগুরা জেলার দর্শনীয় স্থান

মাগুরার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে শ্রীপুর জমিদার বাড়ি, মোকাররম আলী শাহ্‌ (রঃ) দরগাহ, কবি কাজী কাদের নওয়াজের বাড়ি, সিদ্বেশ্বরী মঠ ও রাজা সীতারাম রাজ প্রাসাদ অন্যতম।

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে

ম্যাপে মাগুরার ভাতের ভিটা

শেয়ার করুন সবার সাথে

ভ্রমণ গাইড টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ পাতায় যোগাযোগ করুন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ গাইড দায়ী থাকবে না।