টক-মিষ্টি স্বাদের লটকন (Lotkon) কম-বেশি সবারই পছন্দের একটি ফল। আর লটকনের জন্য নরসিংদী জেলার রয়েছে দেশজোড়া খ্যাতি। নরসিংদীর শিবপুর ও মরজাল উপজেলায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি লটকনের আবাদ হয়ে থাকে। শিবপুর উপজেলার ছোটাবান্দা গ্রামের রাস্তার দুই পাশের অসংখ্য ছোট বড় লটকন বাগান নজরে পড়ে। বাগানের গাছগুলোর গোড়া থেকে শুরু করে শাখা প্রশাখা ও উপশাখা জুড়ে ঝুলতে থাকে থোকা থোকা হাজারো পাকা লটকন। তবে কোন বাগানে ঢোকার আগে অবশ্যই মালিকের অনুমতি নিতে হবে। অধিকাংশ বাগানের মালিক খুবই আন্তরিক এবং দর্শনার্থীদের আগ্রহ নিয়ে নিজেদের বাগান ঘুরে দেখায়। তাই বাগানের মালিকের সাথে কথা বলে নিজ হাতে গাছ থেকে পেড়ে লটকন খেতে পারবেন।

এছাড়া নরসিংদীর উয়ারি বটেশ্বর, রায়পুর, যশোর, আগরপুর, মাকাল্লা, ভিটিখৈনকুট, দক্ষিণ কামালপুর, নৌকাঘাটা, লালখারটেক, ভাঙ্গারটেক সহ আশেপাশের প্রায় সব গ্রামেই কম বেশি লটকন বাগান রয়েছে। স্থানীয়দের কাছে জিজ্ঞাসা করলেই শহরের কাছাকাছি লটকন বাগানগুলো দেখিয়ে দিবে। আর লটকন বিক্রির হাট বসে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরার মরজাল বাজার, সৃস্টিগড় বাজার, শিবপুরের কামারটেক বাজার, চৈতন্য বাজার ও গাবতলী বাজারে। ইচ্ছে হলে লটকন বাজার ঘুরে দেখার সাথে সাথে দরদাম করে লটকন কিনে নিতে পারবেন। লটকন বাগানে ঘুরতে যাওয়া ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার সাথে পরিচয় ঘটায়।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে ট্রেন বা বাসে নরসিংদী যাওয়া যায়। রাজধানীর গুলিস্থান, আব্দুল্লাপুর বা সায়েদাবাদ থেকে ঢাকা-সিলেট রোডে চলাচলকারী বিভিন্ন বাসে কাঁচপুর ব্রিজ পার হয়ে মরজাল বাস স্ট্যান্ড বা সৃষ্টিগড় নামতে হবে। মরজাল বা সৃস্টিগড় থেকে অটো বা রিকশা ভাড়া করে আশেপাশের লটকন বাগানগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন। আর রেলপথে, ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে মহানগর এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ও এগারোসিন্দুর গোধূলির মতো ট্রেনে ১ ঘণ্টায় নরসিংদী যাওয়া যায়। নরদিংদী স্টেশন থেকে ভেলানগর বাস স্ট্যান্ড গিয়ে লেগুনা বা বাসে মরজাল বাস স্ট্যান্ড হয়ে অটোরিকশায় মরজাল ও উয়ারি বটেশ্বর এলাকার লটকন বাগানগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

ঢাকা থেকে নরসিংদী গিয়ে সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসতে পারবেন। তবে প্রয়োজনে নরসিংদী জেলায় অবস্থিত ইব্রাহীম কটেজ, সার্কিট হাউজ, এলজিডির রেস্ট হাউজ ও জেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় রাত্রিযাপন করতে পারেন।

কোথায় খাবেন

নরসিংদী জেলায় ফাল্গুনি হোটেল, বাবুর্চি আলমগির হোটেল, বন্ধু হোটেল ও খোকন হোটেল সহ বিভিন্ন খাবার হোটেল রয়েছে। নরসিংদীর জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে রসগোল্লা, লালমোহন, খিরমোহন ও শাহী জিলাপি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সুযোগ থাকলে ভেলানগরের সুস্বাদু মালাই চা স্বাদ নিয়ে দেখতে পারেন।

লটকন বাগান ভ্রমণ পরামর্শ

  • জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ মাস অর্থাৎ মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত লটকন বাগান দেখার উপযুক্ত সময়। জুলাইয়ের পর থেকে লটকন বাগানের সৌন্দর্য মলিন হতে থাকে।
  • কয়েকজন মিলে গ্রুপে মাইক্রো ভাড়া করে গেলে সৃষ্টিগড় হয়ে চৈতন্য, কুণ্ডপাড়া, নৌকা ঘাটা ও বেলাবোর লটকন বাগানগুলো ঘুরে দেখতে সুবিধা হবে।
  • বাগান মালিকের অনুমতি ছাড়া কোন বাগানে ঢুকবেন না এবং ফল নষ্ট করবেন না।
  • সুবিধার জন্য যে অটো রিকশা ভাড়া করবেন সেই চালকের কোন পরিচিত লটকন বাগানে যেতে পারেন।
  • ফেরার পথে মরজাল বাজার থেকে লটকন কিনে উয়ারি বটেশ্বর দিয়ে বের হবেন।
  • নরসিংদী যাবার পথে পাঁচদোনায় নামবেন না। তাহলে বাড়তি ভোগান্তি হবে।

নরসিংদীর দর্শনীয় স্থান

নরসিংদীর দর্শনীয় স্থানের মধ্যে লক্ষণ সাহার জমিদার বাড়ী, বালাপুর জমিদার বাড়ী, উয়ারি বটেশ্বর ও ড্রিম হলিডে পার্ক ইত্যাদি অন্যতম।

ফিচার ইমেজ: সংগৃহীত

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে

ম্যাপে লটকন বাগান

শেয়ার করুন সবার সাথে

ভ্রমণ গাইড টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ পাতায় যোগাযোগ করুন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ গাইড দায়ী থাকবে না।