দুইটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ হিসেবে পরিচিত সিলেট জেলার চৌকিদেখি উপজেলার ওসমানী বিমান বন্দরের উত্তর প্রান্তে টিলার উপর লাক্কাতুরা চা বাগান অবস্থিত। ন্যাশনাল টি বোর্ডের অধীনস্ত এই সরকারী চা বাগান প্রায় ১২৯৩ হেক্টর বা প্রায় ৩২০০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। অসংখ্য চা গাছ ও উঁচু নিচু পাহাড়ে ঘেরা লাক্কাতুরা চা বাগান দেশের বৃহত্তম চা বাগানগুলোর মধ্যে অন্যতম। বছরে এই চা বাগান থেকে উৎপাদিত প্রায় ৫,০০,০০০ কেজি চা দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হয়।

ওসমানী এয়ারপোর্ট রোড থেকে ডানদিকে আগালেই লাক্কাতুরা বাগানের মূল প্রবেশদ্বার নজরে পডড়ে। বামদিকে রয়েছে চা ফ্যাক্টরি ও রাবার বাগান। ফ্যাক্টরি থেকে সামনে চলে গেছে আঁকাবাঁকা রাস্তা। রাস্তার পাশে চা বাগানের ম্যানেজার ও সহকারী ম্যানেজারের বাংলো। চা বাগানে আরও আছে কমলা, সুপারি, ট্যাং ফল, আগর, আতর সহ অনেক ধরণের গাছ। লাক্কাতুরা চা বাগানের কাছে আছে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত মালনীছড়া চা বাগান ও সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন ও বিমানে সিলেট যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে গ্রীণলাইন, সৌদিয়া, এস আলম, এনা, শ্যামলী পরিবহনের বাসে সিলেট যেতে পারবেন। নন-এসি বাসের জনপ্রতি ভাড়া ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। আর কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে উপবন, কালনী, জয়ন্তিকা ও পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন সিলেট যায়। ট্রেনের জনপ্রতি টিকেটের মূল্য শ্রেণিভেদে ৩২০ থেকে ১১৪৯ টাকা। এছাড়া শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে নভোএয়ার, ইউএস বাংলা কিংবা বিমান বাংলাদেশের মতো ডোমেস্টিক এয়ারলাইন্সে সিলেটে যেতে পারবেন। সিলেট থেকে স্থানীয় পরিবহনে সহজে লাক্কাতুরা চা বাগান পৌঁছানো যায়।  

কোথায় থাকবেন

সিলেটে হোটেল স্টার প্যাসিফিক, নির্ভানা ইন, হোটেল সুপ্রিম, রোজ ভিউ হোটেল, হোটেল ভ্যালি গার্ডেন, হোটেল ফরচুন গার্ডেন,  হোটেল নুরজাহান গ্র্যান্ড, হোটেল ভ্যালি গার্ডেন প্রভৃতি আবাসিক হোটেল রয়েছে।  

কোথায় খাবেন

সিলেটের জিন্দাবাজার এলাকায় পানসী, বিগ বাইট রেস্টুরেন্ট, রেইনবো চাইনিজ, আড্ডা রেস্টুরেন্ট, স্পাইস কিচেন, হাংরী ষ্টেশন, প্রেসিডেন্ট রেস্টুরেন্ট, পালকি ও ট্রিট গ্যালারী সহ অসংখ্য ফাস্টফুড, চাইনিজ ও বাঙ্গালী খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে। আর সুযোগ হলে সিলেটের জনপ্রিয় সাতকড়ার আচার এবং আখনি বিরিয়ানির স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

ভ্রমণ পরামর্শ

  • বাংলো ও ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখতে হলে আগেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
  • শুধু বাগান ঘুরে দেখার জন্য সাধারণত বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তবে অনুমতি নিলে গাইড নিয়ে পুরো বাগান ও চারপাশ ভালভাবে ঘুরে দেখতে পারবেন।
  • নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলুন।
  • চা বাগানে জোঁক ও পোকামাকড়ের উপদ্রব রয়েছে এক্ষেত্রে সতর্ক।

সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান

সিলেটের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রাতারগুল, বিছানাকান্দি, জাফলং, ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, লোভাছড়া, হযরত শাহ্‌জালাল (রঃ) ও হযরত শাহ্‌ পরান (রঃ) এর মাজার, সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, তামাবিল, জিতু মিয়ার বাড়ি, আলী আমজদের ঘড়ি, পান্থুমাই ঝর্ণা, লক্ষনছড়া, ক্বীন ব্রিজ, মালনীছড়া চা বাগান, জৈন্তা হিল রিসোর্ট, ড্রিমল্যান্ড পার্ক, নাজিমগড় গার্ডেন রিসোর্ট, সাতছড়ি জাতীয় উদ্দ্যান, লালাখান, হাকালুকি হাওর ও ডিবির হাওর অন্যতম।

ফিচার ইমেজ: জুবায়ের আহমেদ

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে

ম্যাপে লাক্কাতুরা চা বাগান

শেয়ার করুন সবার সাথে

ভ্রমণ গাইড টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ পাতায় যোগাযোগ করুন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ গাইড দায়ী থাকবে না।