লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার এলাকার লক্ষ্মীপুর রায়পুর সড়কের পূর্ব পাশে প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো বিশাল আয়তনের খোয়াসাগর দীঘি (Khoa Sagor Dighi) অবস্থিত। প্রায় ২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত দীঘির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দিকে তাকালে কুয়শায় ঢেকে আছে বলে মনে হয়। এ কারণে লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় ভাষায় দীঘিটিকে খোয়া বা কুয়াশাময় দীঘি বলা হয়। স্থানীয়দের মতে, প্রায় দুই শতাধিক বছর পূর্বে দালাল বাজারের জমিদার ব্রজবল্লভ রায় আনুমানিক ১৭৫৫ সালে এই দীঘিটি খনন করেন। পরবর্তীতে জমিদার রাজা গৌড় কিশোর রায় দীঘিটির সংস্কার করেন।

প্রাচীন এই দীঘির সাথে জড়িয়ে আছে নানা কল্পকাহিনী। কথিত আছে, কোন এক বরযাত্রী নববধূকে নিয়ে দীঘির পার দিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময় বরযাত্রীদের পানির পিপাসা পেলে তারা দীঘির পাশে পানি পান করার জন্য নামে। কিন্তু যখন নববধূ পানি পান করতে দীঘির পাড়ে নামে তখন দীঘির নিচে অদ্ভূত কোন কিছু বধুর পা ধরে টেনে গভীর পানিতে নিয়ে যায়। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন এই ঘটনার পর পুকুরের এমন গভীর গর্ত হয়ে হয়েছে যে প্রচণ্ড খরায়ও গর্তটি শুকিয়ে যায় না। খোয়াসাগর দীঘির পাশে কোদাল ধোয়া দীঘি নামে আরও একটি দীঘি এবং দালাল বাজার মঠ রয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী খোয়াসাগর দীঘি লক্ষ্মীপুরের একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শোভাবর্ধনের জন্য দীঘির পাড়ে লাগানো হয়েছে অসংখ্য গাছ। সন্ধ্যা নামলে যখন দীঘির পশ্চিম ও পূর্ব পাশ আলোকিত হয়ে উঠে সেই দৃশ্য আরও মনোহর লাগে। দীঘির স্বচ্ছ পানি ও মনোরম পরিবেশের কারণে প্রতিদিন অসংখ্য বিনোদনপ্রেমীরা দৃষ্টিনন্দন এই দীঘির পাড়ে ঘুরতে আসে।

কিভাবে যাবেন

রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে গ্রীনল্যান্ড এক্সপ্রেস, রয়েল কোচ, হিমাচল এক্সপ্রেস, ইকোনো, মিয়ামি, আল বারাকা, জোনাকি সার্ভিস বা ঢাকা এক্সপ্রেসের বাসে লক্ষ্মীপুর জেলায় যাওয়া যায়। এছাড়া ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চে চড়ে লক্ষ্মীপুর মজু চৌধুরীর ঘাটে যেতে পারবেন। লক্ষ্মীপুর জেলা শহর হতে রিকশা বা সিএনজি নিয়ে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত খোয়াসাগর দীঘি দেখতে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

লক্ষ্মীপুরের অবস্থিত আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউসের মধ্যে এনআর গেস্ট হাউজ, স্টার গেস্ট হাউজ, সেন্টমার্টিন আবাসিক, হোটেল ইউনিক, হোটেল নূর, সোনার বাংলা গেস্ট হাউজ, হোটেল আব-ই-হায়াত ও স্টার গেস্ট হাউজ অন্যতম।

কোথায় খাবেন

লক্ষ্মীপুর শহরের মেইন রোডের কাছে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুড শপ রয়েছে। মানসম্মত বাঙ্গালী খাবারের জন্য তৃপ্তি হোটেল, হোটেল রাজ মহল, নিউ লক্ষ্মী, গ্র্যান্ড হোটেল, কুটুম বাড়ি, আব্বাস আলী রেস্টুরেন্ট, মোহাম্মদীয়া হোটেল বা ফুড গার্ডেন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

লক্ষ্মীপুরের দর্শনীয় স্থান

লক্ষ্মীপুরের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে মতিরহাট সৈকত, জ্বীনের মসজিদ, চর আলেকজান্ডার ও দালাল বাজার জমিদার বাড়ি অন্যতম।

ফিচার ইমেজ: মোঃ আলমগীর হোসেন

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে

ম্যাপে খোয়াসাগর দীঘি

শেয়ার করুন সবার সাথে

ভ্রমণ গাইড টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ পাতায় যোগাযোগ করুন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ গাইড দায়ী থাকবে না।