খান জাহান আলীর মাজার (Khan Jahan Ali Mazar) দেখতে হলে খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলায় যেতে হবে। হযরত খান জাহান আলী (র:) এর জন্ম ভারতে হলেও বাংলাদেশের যশোর, বাগেরহাট অঞ্চলে তিনি ধর্ম প্রচার করতে আসেন। তিনিই বাগেরহাটে বিখ্যাত ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন। অনেকের মতে খান জাহান আলী আরব দেশ থেকে দিল্লী হয়ে বাংলাদেশে আসেন । যদিও তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি তবে গবেষকগণ ধারণা করেন খান জাহান আলী সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ্-এর সমসাময়িক ছিলেন। খান জাহান আলী তৎকালীন গৌড়ের সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সেনানায়ক ছিলেন। সুলতানের প্রতিনিধি হিসাবেই খান জাহান আলী বাগেরহাট অঞ্চলে জনপদ সৃষ্টি করে “খলিফাত-ই-আবাদ” নামকরণ করেন এবং ৩৬০ জন আউলিয়ার আগমনের সংখ্যার সাথে মিল রেখে তিনি ভাটি অঞ্চলে ৩৬০ টি মসজিদ নির্মাণ ও ৩৬০ টি দীঘি খনন করে ছিলেন।

খান জাহান আলী ৮৬৩ হিজরী ২৬ জিলহজ্ব বুধবার অর্থাৎ ১৪৫৯ সালের ২৩ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। খাঞ্জেলী দীঘির উত্তর পাড়ে তাঁর সমাধি সৌধ নির্মিণ করা হয়েছে। খান জাহান আলীর সমাধি সৌধটি বর্গাকৃতি। সৌধের প্রাচীর ২৫ ফুট উঁচু এবং এর ছাদে রয়েছে একটি গম্বুজ। এই সমাধি সৌধের ভিতরে একটি পাথরের বেদিতে হযরত খানজাহান আলীর মাজার অবস্থিত। দরগাহ বা মাজারের স্থাপত্যশৈলীর সাথে ষাটগুম্বুজ মসজিদের বেশ মিল রয়েছে। প্রতি বছর বাংলা বর্ষপুঞ্জির ২৫ অগ্রহায়ণ খান জাহান আলী মাজার প্রাঙ্গনে বার্ষিক ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। আর চৈত্র মাসের প্রথম পূর্ণিমায় এখানে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। খান জাহান আলীর মাজার দেখতে, ওরশ এবং মেলায় সারাদেশ থেকে হাজার হাজার ভক্ত মাজারে এসে সমবেত হন।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা এবং সন্ধা ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত মেঘনা, বনফূল, ফাল্গুনী, আরা, পর্যটক, বলেশ্বর, হামিম ও দোলা পরিবহণের বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায়। গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে সোহাগ, শাকুরা, হানিফ, কমফোর্ট লাইন ও ইগল পরিবহণের গাড়ি ছাড়ে। এই বাসগুলোতে জনপ্রতি ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা ভাড়া লাগে।

এছাড়া ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা এসে সেখান থেকে বাসে বা সিএনজিতে করে বাগেরহাট আসতে পারবেন।

খান জাহান আলীর মাজার শরীফ বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এবং খুলনা থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। খুলনা বাগেরহাট মহাসড়ক থেকে মাত্র ৩০০ গজ দূরত্বে খান জাহান আলীর মাজার শরীফের অবস্থান। খুলনা বাগেরহাট মহাসড়কে বাস থেকে নেমে ৫ মিনিট পায়ে হেটে মাজারে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

বাগেরহাটে থাকার জন্য তেমন ভাল ব্যবস্থা নেই, তবে মাঝারি মানের কিছু আবাসিক হোটেল আছে। রেল রোডে মমতাজ হোটেলে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান তুলনামূলক ভাল, তবে খরচ একটু বেশি। এছাড়া বাগেরহাট সদরে সরকারি গেস্টহাউস, হোটেল অভি (০১৮৩৩৭৪২৬২৩) ছাড়াও কেন্দ্রীয় বাস স্টেশন সংলগ্ন হোটেল আল আমিন (০৪৬৮-৬৩১৬৮, ০১৭১৮৬৯২৭৩৭) এবং হোটেল মোহনা (০৪৬৮-৬৩০৭৫, ০১৭২২৮৫৮৩১৩) তে ৪০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকায় রাত্রি যাপন করতে পারবেন।

খুলনা থেকে বাগেরহাট বাসে যেতে মাত্র ১ ঘণ্টা সময় লাগে তাই রাত্রি যাপনের জন্য প্রয়োজনে চলে আসতে পারেন খুলনা বিভাগীয় শহরে।

খাবার সুবিধা

এখানে কিছু সাধারণ মানের খাবার হোটেল রয়েছে তাই খাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ড কিংবা দরগার কাছে হোটেলগুলোতে যেতে পারেন। তবে অবশ্যই খাবারের মান ও দাম সম্পর্কে জেনে নিন।

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে

ম্যাপে খান জাহান আলীর মাজার

শেয়ার করুন সবার সাথে

ভ্রমণ গাইড টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ পাতায় যোগাযোগ করুন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ গাইড দায়ী থাকবে না।