কুমিল্লা সদর উপজেলার থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে কোটবাড়িতে অবস্থিত ইটাখোলা মুড়া (Itakhola Mura) সপ্তম বা অষ্টম শতকে নির্মিত একটি বৌদ্ধ বিহার। রূপবান মুড়ার বিপরীত পাশে সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৪০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই প্রত্নস্থানে তিনটি স্তর পরিলক্ষিত হয়। প্রাচীনকাল থেকেই এখানে ইট পোড়ানো কারণে জায়গাটি ইটাখোলা মুড়া নামে পরিচিতি লাভ করে।
ইটাখোলা মুড়ায় বিভিন্ন সময় প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে একটি বৌদ্ধ মঠ ও বৌদ্ধস্তূপের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রায় ৫টি সাংস্কৃতিক যুগ অতিক্রম করার ফলে এই স্থানের সকল প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনগুলো উদ্ধার করা বেশ জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবিষ্কৃত স্থানের মধ্যে বিস্তীর্ণ স্তূপ কমপ্লেক্স ইটাখোলা মুড়ার মূল আকর্ষণ। প্রায় ১৩.১ বর্গমিটার ভিতের উপর অবস্থিত এই স্তূপের সম্মুখভাগের কেন্দ্রে ২.৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২.১ মিটার প্রস্থ্যের একটি ক্ষুদ্র পীঠস্থান রয়েছে।
ইটাখোলা মুড়ার প্রবেশ পথ ধরে উপরে উঠলে আয়তাকার ক্ষেত্রের মাঝখানে এই বিহারে মূল মন্দিরটি দেখতে পাওয়া যায়। এই মন্দিরের প্রধান উপাস্য হলেন ধ্যানী বুদ্ধ অক্ষোভ্য। এখানে ৩য় নির্মাণ যুগে নির্মিত একটি মস্তকবিহীন বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে। ইটাখোলা মুড়া থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনের মধ্যে প্রায় ১৮ তোলা ওজনের স্বর্ণ, মাটির পাতিলে রক্ষিত সোনার বল, রৌপ্য মুদ্রা, তাম্রশাসন, মাটির ফলকলিপি, ধ্যাণী বুদ্ধ মূর্তির আবক্ষ অংশ, ধাতব ধ্যানীবুদ্ধ অক্ষোভ্য, ধাতব ধ্যানীবুদ্ধ অমিতাভ, গণেশ মূর্তি, অলংকৃত পোড়া মাটির ফলক, মাটির পাত্র, তেলের প্রদীপ, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
কিভাবে যাবেন
ইটাখোলা মুড়া যেতে হলে কুমিল্লা জেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে ট্রেন ও বাসে চরে কুমিল্লা যাওয়া যায়। কমলাপুর হতে মহানগর প্রভাতী/গোধূলী, উপকূল এক্সপ্রেস, পাহারিকা এক্সপ্রেস ও তূর্ণা সহ চট্টগ্রামগামী বিভিন্ন ট্রেনে কুমিল্লা যেতে পারবেন।
সড়কপথে ঢাকার সায়েদাবাদ বা কমলাপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে রয়্যাল কোচ, এশিয়া এয়ারকন, বিআরটিসি, প্রিন্স, এশিয়া লাইন, তৃষার মতো নন-এসি/এসি বাস ছাড়াও চট্টগ্রাম বা ফেনিগামী বাসে কুমিল্লা যাওয়া। বাস থেকে কুমিল্লার কোটবাড়ি বাস স্ট্যান্ড নেমে সিএনজি বা অটো রিকশাযোগে ইটাখোলা মুড়া যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
কুমিল্লা কান্দিরপাড়, শাসনগাছা ও ষ্টেশন রোডে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। এদের মধ্যে হোটেল সোনালী, হোটেল ভিক্টোরিয়া আবাসিক, আমানিয়া রেস্ট হাউজ, হোটেল ড্রিম ল্যান্ড, মাসুম রেস্ট হাউজ, হোটেল মেলোডি, হোটেল নূর উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন
ইটাখোলা মুড়া যাওয়ার পথে ইরিশ হিল হাইওয়ে হোটেল, সৌদিয়া হোটেল, ঝাল বাংলা রেস্তোরা, হোটেল ময়নামতি, উজান হাইওয়ে, আনোয়ার হোটেল, সাকিব হোটেল এবং লিজা হোটেল সহ বেশকিছু ভালমানের রেস্টুরেন্টে আপনার পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। আর অবশ্যই কুমিল্লার মনোহরপুরের মাতৃভাণ্ডারের বিখ্যাত রসমালাই ও রসগোল্লা, ভগবতীর পেড়া, মিঠাইয়ের মালাই চপের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
ফিচার ইমেজ: মেহেদী হাসান
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।