আঁশবিহীন সুস্বাদু আম হিসেবে রংপুর জেলার হাড়িভাঙ্গা আম (Haribhanga Mango) সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে সমাদৃত। জনপ্রিয় এই আমের উৎস রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছের তেকানি গ্রাম। হাড়িভাঙ্গা আমের নামকরণ নিয়ে বেশ প্রচলিত এক জনশ্রুতি রয়েছে। তেকানি ও তার আশেপাশের এলাকা বরেন্দ্রপ্রবণ অঞ্চল হবার কারণে চারা গাছে পানি দেওয়ার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে হতো। সেই সময় নফল উদ্দিন পাইকার নামের এক বৃক্ষবিলাসী প্রথম এই আমটির গোড়াপত্তন করেছিলেন ।

শুরুতে এই আমের নাম দেওয়া হয়েছিল মালদিয়া। তিনি আমগাছটিতে পানি দেওয়ার জন্য গাছের নীচে মাটির হাঁড়ি দিয়ে ফিল্টার বানিয়েছিলেন। একদিন কারা যেন মাটির এই হাঁড়িটি ভেঙ্গে ফেলে। ভাঙ্গা ঐ হাঁড়ির মধ্যেই গাছটি বড় হতে থাকে আর মৌসুমে প্রচুর আম ধরে। সুস্বাদু এই আম বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে গেলে চাষি নফল উদ্দিন জানায় ভাঙ্গা হাঁড়ির সেই গাছ থেকেই সুস্বাদু জাতের এই আমের ফলন হয়েছে। সেই থেকে এই গাছটি হাড়িভাঙ্গা আম গাছ হিসেবে পরিচিতি পায়।

হাড়িভাঙ্গার গোঁড়া পত্তনকারী নফল উদ্দিনের লাগানো সেই মাতৃগাছটি আজো রংপুরের মিঠাপুকুরের খোড়াগাছের তেকানি গ্রামে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে। প্রাচীন সেই গাছটির বয়স প্রায় ৬৩ বছর। এই গাছ থেকেই হাজার হাজার কলম তৈরি করে হাড়িভাঙ্গার চারা গাছ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

হাড়িভাঙ্গা আমের স্বাদ ও গন্ধ অন্যান্য আমের তুলনায় ভিন্ন। আঁশহীন এই আমের উপরের অংশ বেশ মোটা ও চওড়া এবং নিচের অংশ চিকন। সাধারণত অন্যান্য আমের তুলনায় এই আম কিছুদিন পর পাকে। হাড়িভাঙ্গা পাকলেও কিছুটা সবুজ থাকে এবং হালকা হলুদাভাব বর্ণ ধারণ করে। এক একটি আমের ওজন ৪০০-৭০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। হাঁড়িভাঙা আমের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল চামড়া কুচকে গেলেও আম সহজে পচে না। হাড়িভাঙ্গা আম খেতে হলে মৌসুমের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাস ও ট্রেনে রংপুর (Rangpur) জেলায় যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে হানিফ, গ্রীন লাইন, এস আর, আগমনী, শ্যামলী, নাবিল বা টি আর পরিবহণের বাসে রংপুরে যেতে পারবেন। আবার ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়েও রংপুর যাওয়া যায়। রংপুর থেকে স্থানীয় পরিবহণে মিঠাপুকুরে অবস্থিত হাড়িভাঙ্গা আমের বাগানে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

রংপুর জেলায় হোটেল নর্থভিউ, হোটেল কাসপিয়া, হোটেল শাহ্‌ আমানত, হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার, হোটেল ফ্রেন্ডস আবাসিক, হোটেল রাজ আবাসিক, হোটেল গার্ডেন প্রভৃতি আবাসিক হোটেল রয়েছে।

কোথায় খাবেন

মিঠাপুকুরে মধ্যম মানের কিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে। আর রংপুর জেলায় উন্নতমানের বাঙ্গালী, চাইনিজ ও ফাস্ট ফুড খাবারের রেস্তোরাঁ পাবেন। শীল বিলাতি আলু রংপুরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য খাবার।    

রংপুর জেলার দর্শনীয় স্থান

রংপুরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে পায়রাবন্দ, দেবী চৌধুরাণীর রাজবাড়ী, লালদীঘি নয় গম্বুজ মসজিদ, প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক, ভিন্নজগত পার্ক, তাজহাট জমিদার বাড়ি অন্যতম।

ফিচার ইমেজ: সংগৃহীত

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে

ম্যাপে রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম

শেয়ার করুন সবার সাথে

ভ্রমণ গাইড টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ পাতায় যোগাযোগ করুন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ গাইড দায়ী থাকবে না।