স্বর্ণ মন্দির বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে বালাঘ্টা এলাকায় অবস্থিত। এই স্বর্ণ মন্দিরটি মহাসুখ মন্দির বা বৌদ্ধ ধাতু জাদী নামেও সমানভাবে পরিচিত। স্বর্ণমন্দির নাম হলেও এখানে স্বর্ণ দিয়ে তৈরি কোন স্থাপনা নেই। তবুও মন্দিরে সোনালি রঙের আধিক্যের জন্য এটি স্বর্ণমন্দির হিসাবে পরিচিত। পাহাড়ের চূড়ায় তৈরী এ সুদৃশ্য প্যাগোডা বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের পবিত্র একটি তীর্থস্থান। দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য বৌদ্ধ ধর্মালম্বী এই স্বর্ণমন্দির দেখতে এবং প্রার্থনা করতে আসেন। গৌতমবুদ্ধের সমসাময়িক কালে নির্মিত বৌদ্ধ মুর্তির একটি এখানে স্থাপন করা হয়েছে। এই মন্দিরটি প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্যাগোডা দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য বৌদ্ধ স্থাপনার মধ্যে অন্যতম উপাশনালয়। পাহাড়ের উপর দেবতা পুকুর নামে একটি পানি সম্বলিত ছোট পুকুর আছে।
স্বর্ণমন্দিরটি বর্তমানে বান্দরবান জেলার অন্যতম পর্যটন স্থান হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। এই প্যাগোডার নির্মাণশৈলী মায়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ টেম্পল গুলোর অনুকরণে তৈরী। এই প্যাগোডা আধুনিক ধর্মীয় স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। প্রতিবছর নির্দৃষ্ট সময়ে এখানে মেলা বসে। প্যাগোডাটি পূজারীদের জন্য সারাদিন খোলা থাকে। কিছুদিন আগে দর্শনার্থীদের জন্যে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বর্তমানে দর্শনার্থীদের জন্যে স্বর্ণমন্দির উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
স্বর্ণ মন্দির ভিডিও
https://www.youtube.com/watch?v=Kg9JCPARQFQ
কিভাবে যাবেন
ঢাকার আব্দুল্লাহপুর, আরামবাগ, কল্যাণপুর, গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে এস. আলম, সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ইউনিক, হানিফ, শ্যামলি, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস বান্দারবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি এসব বাসের ভাড়া যথাক্রমে নন এসি ৭০০-৮০০ টাকা ও এসি ১০০০-১৬০০ টাকা। ঢাকা থেকে বাসে বান্দরবান যেতে সময় লাগে ৮-১০ ঘন্টা।
ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম গামী সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিতা, মহানগর গোধূলি এইসব ট্রেনে করে চট্রগ্রাম যেতে পারবেন। শ্রেনীভেদে ভাড়া ৩৪৫ থেকে ১২২৯ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে আকাশ পথে সরাসরি চট্রগ্রাম আসতে পারবেন।
চট্টগ্রামের বদ্দারহাট থেকে পূবালী ও পূর্বানী নামের দুটি বাদ বান্দারবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ দুটি বাসে জনপ্রতি ২২০ টাকা ভাড়া লাগে। চট্রগ্রামের ধামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ২০০-৩০০ টাকা ভাড়ায় বাসে করে বান্দরবান আসতে পারবেন।
বান্দরবান থেকে স্বর্ণ মন্দির যাবার উপায়
বান্দরবান থেকে সিএনজি অটোরিক্সা বা চান্দেরগাড়ী/জীপ ভাড়া করে স্বর্ণমন্দির যেতে পারবেন। শুধু স্বর্ণমন্দির যাওয়া আসার জন্যে ৩০০-৭০০ টাকা নিবে। তবে সাধারণত পর্যটকগন বান্দরবানের আশেপাশে আরও দর্শনীয় জায়গা যেমন নীলগিরি, নীলাচল, চিম্বুক, শৈলপ্রপাত, মেঘলা ইত্যাদি এইসব জায়গা দেখা সহ গাড়ি রিজার্ভ নেয়।
আপনি আপনার সময় ও কি কি দেখবেন সেই ইচ্ছে অনুযায়ী ভ্রমণ পরিকল্পনা করে পছন্দমত গাড়ি রিজার্ভ করে নিতে পারবেন। নীলাচল, মেঘলা, স্বর্ণমন্দির এই গুলো ঘুরে দেখার জন্যে জীপ (৬-৮ সিট) ভাড়া নিবে ১০০০-১২০০ টাকা, চান্দের গাড়ি ভাড়া নিবে ১২০০-১৫০০টাকা, সিএনজি ভাড়া নিবে ৫০০-৮০০ টাকা। দাম ঠিক করার আগে কি দেখবেন কোথায় যাবেন ভালো করে বলে নিবেন আর দরদাম করে নিবেন।
গাড়ি নিয়ে স্বর্ণমন্দির যেতে রাস্তায় আপনাকে ২০-৩০ টাকা টোল দিতে হবে, আর স্বর্ণমন্দিরে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ২০ টাকা ফি লাগবে।
কোথায় থাকবেন
বান্দরবানে অসংখ্য রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল এবং রেস্টহাউজ রয়েছে। যেগুলোতে ৬০০ থেকে ৩০০০ টাকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
হোটেল হিল ভিউ: বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই। ভাড়া ৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
হোটেল হিলটন: বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর কাছেই। ভাড়া ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
হোটেল প্লাজা: বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫মিনিট হাঁটা দূরত্বে। ভাড়া ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
রিভার ভিউ: শহরের সাঙ্গু নদীর তীর ঘেষে হোটেলটির অবস্থান। ভাড়া ৬০০ থেকে ২০০০ টাকা।
পর্যটন মোটেল: পাহাড় ও লেকের পাশেই অবস্থিত। শহর থেকে ৪ কি:মি: দুরে মেঘলায় অবস্থিত। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
মনে রাখা ভালো কোন সময়ে যাচ্ছেন তার উপর ভাড়া নির্ভর করবে। সিজন (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারী) ও সরকারি ছুটির দিনে পর্যটকের সমাগম বেশি হয় বলে ভাড়া কম বেশি হতে পারে। আর আপনি সিজন ও ছুটির দিনে যান তাহলে ঝামেলা এড়াতে আগে থেকেই হোটেল রুম বুকিং করে রাখতে পারেন। অফসিজনে গেলে ২০-৫০% ডিসকাউন্ট থাকে। এছাড়া অসংখ্য রিসোর্ট, হোটেল, মোটল এবং রেস্টহাউজ রয়েছে যেগুলোতে ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় সহজেই রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
পর্যটকদের খাবার জন্য বান্দরবান শহরে মাঝারি মানের বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। সেগুলো থেকে নিজের পছন্দ মত হোটেলে তিন বেলার খাবার খেয়ে নিতে পারেন।
তার মধ্যে তাজিং ডং ক্যাফে, মেঘদূত ক্যাফে, ফুড প্লেস রেস্টুরেন্ট, রুপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট, রী সং সং, কলাপাতা রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি।
পরামর্শ
- বিকেল বেলা স্বর্ণমন্দির ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। বিকেলের সূর্যের আলোতে মন্দির অদ্ভুত সুন্দর রূপ ধারন করে।
- সন্ধ্যা ৬টা পর আর মন্দিরে প্রবেশ করা যায় না।
- শর্ট প্যান্ট বা লুঙ্গি পড়ে মন্দিরে প্রবেশ নিষেধ। তাই ভ্রমন করার সময় বিষয়টি মনে রাখুন।
- মন্দিরের অভ্যন্তরে জুতা নিয়ে প্রবেশ করা নিষেধ।
- মন্দিরে প্রবেশের আগে ও পরে ভিক্ষুদের আদব কায়দা মেনে চলুন।
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।