বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী/আদিবাসী/উপজাতি জনগোষ্ঠীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রাম জেলার আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার বাদামতলী মোড় সংলগ্ন দেশের একমাত্র জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর (Ethnological Museum) প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১.২৫ একর জমির উপর স্থাপিত চট্টগ্রামের জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত অন্য জাদুঘরের (জাপান) তুলনায় আকার-আয়তন ও সংগ্রহের ব্যাপকতায় বৃহত্তম।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। জাদুঘরের ১১টি প্রদর্শনী কক্ষে ২৯টি নৃগোষ্ঠীর আচার, রীতি-নীতি, জীবন প্রবাহকে নিপুণতার সাথে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের ২৫টি এবং বিশ্বের আরও ৫টি জাতিতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর তুলনামূলক বিশ্লেষণ এই জাদুঘরকে সমৃদ্ধ করেছে। মানচিত্র, মডেল, কৃত্রিম পরিবেশ, দেওয়াল চিত্র ইত্যাদি ব্যবহার করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বাস্তব প্রবাহ চিত্র দেখানো হয়েছে।
জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরে বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী মধ্যে চাকমা, ত্রিপুরা, মারমা, বম, স্নো, খুমি, খিয়াং, চাক, পাবেখো, রাখাইন, মনিপুরী, খাসিয়া, পাঙন, গারো, হাজং, দালু, মান্দাই, কোচ, সাঁওতাল, ওরাঁও, রাজবংশী, পলিয়া, বুনো, বা বোনা, বাগদি প্রভৃতির জাতিতাত্ত্বিক ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের পাঠান, সিন্ধি, কাফির, পাঞ্জাবী, সোয়াত; ভারতের ফুওয়া, আদি, মিজো, মুরিয়া; কিরগিজস্থান (প্রাক্তন রাশিয়া), অস্ট্রেলিয়ারও জার্মানির বিভিন্ন নিদর্শন প্রদর্শিত আছে। উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সম্পর্কে জানার আগ্রহে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী এই জাদুঘরে আসেন।
জাদুঘরের ৩টি গ্যালারীতে ২৫টি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নানা ব্যবহার্য সামগ্রী (যেমন- ফুলদানী, কাপড়, নৌকা, কাচি, অলঙ্কার, বাঁশের পাইপ ইত্যাদি রাখা আছে। নৃতাত্ত্বিক জিনিসপত্র ছাড়াও জাদুঘরে একটি গ্রন্থাগার ও সুন্দর গুছানো বাগান রয়েছে। জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। জাদুঘরটি প্রতি সপ্তাহের রবিবার এবং সকল সরকারী ছুটির দিনে বন্ধ থাকে।
কিভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম শহরের যেকোন স্থান থেকে বাস, সিএনজি ও রিকশায় চড়ে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরে যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম: ঢাকাস্থ সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া, ইউনিক, টিআর ট্রাভেলস, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী, সোহাগ, এস. আলম, মডার্ন লাইন ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবহনের এসি-নন/এসি বাসে চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। আর ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্টগ্রাম যেতে চাইলে কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন হতে সোনার বাংলা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী, চট্রগ্রাম মেইলে যাত্রা করতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
চট্টগ্রাম শহরের ষ্টেশন রোড, জেএসসি মোড় এবং আগ্রাবাদ এলাকায় বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব আবাসিক হোটেলের মধ্যে হোটেল স্টার পার্ক, হোটেল ডায়মন্ড পার্ক, হোটেল মিসখা, হোটেল হিলটন সিটি, এশিয়ান এসআর হোটেল, হোটেল প্যারামাউন্ট, হোটেল সাফিনা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য হোটেল জামানের বেশ সুনাম রয়েছে। আর মেজবানি খাবারের জন্য চকবাজারের মেজবান হাইলে আইয়্যুন রেস্তোরাঁ প্রসিদ্ধ। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরে অসংখ্য ভালমানের খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ছড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে বারকোড ক্যাফে, ক্যাফে ৮৮, গ্রিডি গাটস, সেভেন ডেইজ, গলফ গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, কোষ্টাল মারমেইড রেস্টুরেন্ট এন্ড লাউঞ্জ, বোনানজা পোর্ট রেস্টুরেন্ট প্রভৃতি অন্যতম।
ফিচার ইমেজ: মোঃ ইমরানুল হক
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।