প্রায় ছয়শত বছরের প্রাচীন ধানুকা মনসা বাড়ি (Dhanuka Manasha Bari) শরীয়তপুর জেলার প্রবীণ ব্যক্তিবর্গের কাছে ময়ুর ভট্টের বাড়ি নামে পরিচিত। ধানুকা মনসা বাড়িতে সুলতানী ও মোগল আমলের স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত ৫ টি ইমারত রয়েছে। যার মধ্যে আছে দুর্গা মন্দির, মনসা মন্দির, কালি মন্দির, নহবতখানা এবং আবাসিক ভবন।
তৎকালীন সময়ে মনসা দেবীর পূজো দেয়ার জন্য ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ময়ূর ভট্টের বাড়ীতে বহু লোকের আগমণ ঘটতো। তখন থেকেই মনসা বাড়ি হিসাবে বাড়িটির নাম চারদিকে প্রচার হতে থাকে। তবে মনসা বাড়ি নামকরণের আরো একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। ময়ূর ভট্ট বাড়ির এক কিশোর পর পর তিন দিন বাগানে ফুল কুড়াতে গিয়ে একটি বিশালাকার সাপ দেখতে পায়। চর্তুথ দিন সাপটি বাড়ির উঠোনে নৃত্য করতে থাকে। সেই রাতে মনসা দেবী ভট্টবাড়ির লোকদের স্বপ্নে দর্শন দিয়ে মনসা মন্দির স্থাপন এবং পূজা আয়োজনের নির্দেশ দেন। আর তখন থেকেই ময়ূর ভট্ট বাড়ি হয়ে যায় মনসা বাড়ি এবং বাড়িটির অবস্থান ধানুকা গ্রামে হওয়ায় মনসা বাড়ির সাথে ধানুকা শব্দটি যুক্ত হয়ে ধানুকা মনসা বাড়ি নামে পরিচিতি লাভ করে।
ধানুকা মনসা বাড়িতে একটি পিতলের মূর্তি রয়েছে। যা এক সময় হারিয়ে যায় এবং বেশকিছু বছর পর কীর্তিনাশা নদী থেকে জেলেরা উদ্ধার করে। বলে রাখা ভাল কীর্তিনাশা হচ্ছে পদ্মা নদীর অন্য নাম। ১৯৭৩ সালে ধানুকার মনসা বাড়ি থেকে ইতিহাস গবেষক মাস্টার জালাল উদ্দিন আহম্মেদের কাঠের বাধাই করা তুলট কাগজে লিখিত পুথি উদ্ধার করা হয়। যা বর্তমানে শরীয়তপুর জেলার বেসরকারি পাবলিক লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে।
কিভাবে যাবেন
মনসা বাড়িটি দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই শরীয়তপুর জেলায় আসতে হবে। শরীয়তপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের ধানুকা গ্রামে এই ঐতিহ্যবাহী ধানুকা মনসা বাড়ির অবস্থান। শরীয়তপুর শহরের যেকোন স্থান থেকে রিকশা যোগে মনসা বাড়িতে যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে মাওয়া আসার পর লঞ্চ, বোট, ট্রলার অথবা ফেরীর মাধ্যমে নদী পার হয়ে মঙ্গল মাঝির ঘাট আসুন। মঙ্গল মাঝির ঘাট থেকে বাসে চড়ে শরীয়তপুর শহরে আসার পর অল্প টাকা রিকশা ভাড়ায় ধানুকা মনসা বাড়ি পৌঁছে যাবেন।
কোথায় থাকবেন
শরীয়তপুর জেলায় খুব ভাল হোটেল আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। শরীয়তপুর জেলা সদরে অবস্থিত আবাসিক হোটেলের মধ্যে নুর হোটেল, চন্দ্রদাস রেস্ট হাউজ, হোটেল শের আলী উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন
শরীয়তপুর জেলা শহরে খাবারের জন্য বিভিন্ন মানের চাইনিজ এবং বাংলা খাবারের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট পাবেন। আপনার সাধ্যের মধ্যে যেকোন হোটেল থেকে খাবার খেতে পারবেন। শরীয়তপুর শহরে খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্টের মধ্যে উৎসব চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, হোটেল জনতা, চিকন্দি ফুড পার্ক, চিলেকোঠা ক্যাফে এন্ড রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য।
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।