রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন হিসাবে আখ্যায়িত ছোট সোনা মসজিদ (Choto Sona Mosque) অবস্থিত। ছোট সোনা মসজিদের প্রধান প্রবেশ পথের উপরে স্থাপিত শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৪৯৩ থেকে ১৫১৯ সালের মধ্যে সুলতান হুসাইন শাহর শাসনকালে জনৈক মনসুর ওয়ালী মুহম্মদ বিন আলী ছোট সোনা মসজিদটি নির্মাণ করেন। প্রচলিত আছে, একসময় মসজিদের গম্বুজগুলো সোনা দিয়ে মোড়ানো ছিল এবং সে কারণেই মসজিদটি সোনা মসজিদ হিসাবে পরিচিতি পায়। আর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছে ভারতে আয়তনে বড় আরেকটি সোনা মসজিদ থাকায় এই মসজিদটি সকলের কাছে ছোট সোনা মসজিদ নামে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠে। মসজিদের সামনের আঙ্গিনা পশ্চিম থেকে পূর্বে ৪২ মিটার এবং দক্ষিণ থেকে উত্তরে ৪৩.৫ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
সোনা মসজিদে গ্রানাইটের টালি ব্যবহৃত হয়েছে। সুলতানি স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত ছোট সোনা মসজিদে ইটের তৈরি ১২ টি গম্বুজ রয়েছে। আর মসজিদের চারপাশের দেওয়াল প্রায় ৬ ফূট চওড়া এবং ভেতর ও বাহিরে পাথরের টালি দিয়ে আবৃত। মসজিদের চার কোনায় ৪ টি আটকোনা মিনার রয়েছে। ছোট সোনা মসজিদের পূর্বে ৫ টি এবং দক্ষিণ ও উত্তর দিকে ৩ টি করে ৬ টি খিলান প্রবেশ পথ রয়েছে। পূর্ব দিকের প্রবেশ পথের সোজাসুজি পশ্চিম দিকের দেয়ালে নকশা খচিত ৫ টি মিহরাব আছে।
ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ৩০২ কিলোমিটার আর রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দূরত্ব ৩১৯ কিলোমিটার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কোতোয়ালী গেইট থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার এবং তাহখানা কমপ্লেক্স থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ছোট সোনা মসজিদ অবস্থিত। মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে বিশাল এক দিঘী। মসজিদের পশ্চিম দিকে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিপ্তর কতৃক নির্মিত একটি আধুনিক গেষ্ট হাউস রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ঐতিহাসিক ছোট সোনা মসজিদটি তত্ত্বাবধান করছে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিভিন্ন ভাবে যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে বাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে চাইলে রাজশাহী হয়ে কিংবা সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়া যায়। তবে ঢাকা থেকে ট্রেন কিংবা বিমানে করে যেতে চাইলে আপনাকে আগে রাজশাহী এসে তারপর চাঁপাইনবাবগঞ্জ এতে হবে। মডার্ন, হানিফ এবং শ্যামলী পরিবহনের বাসে রাজশাহী হয়ে সহজে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়া যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে সিএনজি, অটোরিক্সা বা বাসে করে সরাসরি ছোট সোনা মসজিদে যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে রাজশাহী হয়ে সোনা মসজিদ
রাজধানী ঢাকা শহর থেকে সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে রাজশাহী যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর থেকে গ্রীন লাইন এবং দেশ ট্রাভেলসের এসি বাস ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা ভাড়ায় রাজশাহীর উদ্দেশ্যে যাতায়াত করে। আর শ্যমলি, হানিফ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, বাবলু এন্টারপ্রাইজ প্রভৃতি নন-এসি বাস ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা ভাড়ায় চলাচল করে।
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশান থেকে ধুমকেতু এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, সিল্কসিটি ও পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেন রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসব ট্রেনে শ্রেনীভেদে ভাড়া শোভন চেয়ার ৩৪০-৩৭৫, স্নিগ্ধা ৬৫৬-৭২৫, এসি সিট ৭৮২-৮৬৫ এবং এসি বার্থ ১২২৩ টাকা।
আকাশ পথে রাজশাহীতে যেতে চাইলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ার এর বিমানে ৩৫০০ থেকে ৪০৯৯ টাকায় ভ্রমণ করতে পারবেন
রাজশাহী থেকে লোকাল বাসে চড়ে ৭০ টাকা ভাড়ায় কানসাট এসে, সেখান থেকে ১০ টাকা অটো ভাড়ায় ছোট সোনা মসজিদে পৌঁছাতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে শহরে রাতে থাকার জন্য বেশকিছু হোটেল আছে। শহরেই আছে থ্রি স্টার মানের স্কাই ভিউ ইন (+88 01955 66 88 99)। এছাড়া কম খরচে থাকার জন্যে উল্লেখযোগ্য হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ (01761-855471), লাল বোডিং (01718-279841), হোটেল আল নাহিদ (01713-376902), হোটেল স্বপ্নপুরী (01711-416041), নবাবগঞ্জ বোডিং (01715-167646), হোটেল রংধনু (01712-339687) ইত্যাদি।
কোথায় খাবেন
ছোট সোনা মসজিদের আশেপাশে খাবারের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। তবে চাপাইনবাবগঞ্জে খাবারের জন্য বেশ কিছু বিভিন্ন মানের হোটেল/রেস্টুরেন্ট পাবেন। তবে শিবগঞ্জের আদি চমচম খেতে ভুলবেন করবেন না।
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।