সবুজে ঢাকা শান্ত নিরিবিলি স্থান হিসাবে দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রায় ২৫ একর জায়গা জুড়ে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংগ্রহ নিয়ে ১৯৬৩ সালে বোটানিক্যাল গার্ডেন (Botanical Garden) প্রতিষ্ঠা করা হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা বোটানিক গার্ডেনস কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল (বিজিসিআই) কতৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের প্রথম বোটানিক্যাল গার্ডেনে ১০০০টি বড়, ১২৭৮টি মাঝারি এবং ৪৪৬৭টি ছোট বৃক্ষ সহ প্রায় ৬০০টি বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এদের মধ্যে গুটগুটিয়া, আফ্রিকান টিউলিপ, কাইজেলিয়া, স্বর্ণঅশোক, কুম্ভি, নাগেশ্বরচাপা, বুধানারিকেল, পাটেনজাবা, পাহাড়ি কাশ, কাইকা, সিন্দুরি, বিক্সা চান্দুল, এপিকাক প্রভৃতি কালাহুজা, প্যাশন ফ্রুট, ডেরিস, কালোমেঘ, মিছরিদানা, নিলকান্ত, শতমূলী, স্বর্পগন্ধা, তালমুলি, হানি সাকল, বানকলা, হলুদ কাঞ্চন, শম্ভুকাস, অনন্ত লতা, খামি, কুলানজান, কানথাকাশ, সুলতানচাপা, কাইকা, কানসুনালু, লেতকানথা, পাটিপাটা, নাক্সভোমিকা, নদাজাম, তিথিজাম, আজুলি, শাল, খারাজুরা, আরুসা, পানিকলমি, খুসখের, এলেনা, চাগাল্লাদি, মোথা, আভুকাদো, ডুরিয়ান, কোকুয়া, সাতকরা, বরমালা, মেইলাম, স্বর্ণ অশোক, রাজ অশোক, ব্রানফেলসিয়া, ক্যাকটাস, লালচিতা, নিলচিতা, গালমরিচ, মাসুকদা, গানিয়ারি, গ্রিলিরিচিডা, ফার্ন হরিণসিংঙ্গা, আতমরা, বেরিয়া, বেহেলাতদ, ফার্ন কড়ই, গার্ডেনিয়া, ব্যামবুস, রনডেলিটিয়া, টাবেবুইয়া, ডুমবিয়া, বনজারি, জয়ত্রী, জয়পাল, নাগনাথ, জাচারান্দা, বন্য খেজুর, স্কাফেলারা, রাভেনিয়া, জাকুটিভাসা, ভেরিগেটেট মন্ডার, পারসিমন, হারগুজা কান্তাপ্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে থেকে একজন দুই বছরের জন্য গার্ডেন কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করেন। এই বোটানিক্যান গার্ডেনটি স্নাতক, মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থীদের গবেষণা কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও আশেপাশের অন্যান্য জেলা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রছাত্রীরা উদ্ভিদজগত সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের জন্য বোটানিক্যাল গার্ডেনে আসেন। বিপুল উদ্ভিদরাজি ছাড়াও এখানে আগত দর্শনার্থীদের জন্য আছে বিভিন্ন পশু-পাখির প্রতিকৃতি এবং প্রায় অর্ধশত বিশ্রাম বেঞ্চ।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ বাকৃবির শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রবেশ করতে পারে। সাধারণ দর্শনার্থীদের ভেতরে প্রবেশের জন্য প্রবেশ কুপন সংগ্রহ করতে হয়। বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতি সপ্তাহের রবি থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সকল দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। আর সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে ময়মনসিংহ জেলা শহরে এসে রিকশা বা অটোরিকশা নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেন যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে এনা, আলম এশিয়া, শামীম এন্টারপ্রাইজ, শৌখিন কিংবা নিরাপদ পরিবহনের বাসে করে ২৬০ টাকা ভাড়ায় ময়মনসিংহ যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে।
ঢাকা থেকে ট্রেনে ময়মনসিংহ ভ্রমণ করতে চাইলে তিস্তা এক্সপ্রেস (সকাল ৭ঃ৩০), মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস (দুপুর ০১ঃ১৫), যমুনা এক্সপ্রেস (বিকেল ০৪ঃ৪৫), ব্রহ্মপুত্র (সন্ধ্যা ০৬ঃ১৫) এবং হাওর এক্সপ্রেস (রাত ১০ঃ১৫) এইসব ট্রেনের যে কোনটায় আপনার সময় ও পছন্দমত ট্রেনে সরাসরি ময়মনসিংহ যেতে পারবেন। শ্রেণীভেদে ভাড়া ১২০ থেকে ২৭১ টাকা। যেতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা।
কোথায় থাকবেন
ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেলের মধ্যে আমির ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল মুস্তাফিজ, হোটেল সিলভার ক্যাসেল, হোটেল হেরা, হোটেল খাঁন ইন্টারন্যাশনাল, নিরালা রেস্ট হাউস, হোটেল ঈশা খাঁ, হোটেল উত্তরা, তাজমহল ইত্যাদি অন্যতম।
কোথায় খাবেন
ময়মনসিংহ শহরে প্রেসক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাও চেখে দেখতে পারেন। এছাড়া হোটেল ধানসিঁড়ি ও হোটেল সারিন্দার ভাল মানের খাবারের জন্য বেশ সুনাম রয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলার দর্শনীয় স্থান
ময়মনসিংহ জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আলেকজেন্ডার ক্যাসেল, মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা, শশী লজ, ময়না দ্বীপ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
ফিচার ইমেজ: আতিয়ার রহমান
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।