আবহমান গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকশিল্পকে ধরে রাখা ও সর্বজন স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্দেশ্য ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁওয়ের পানাম নগরীর একটি পুরোনো বাড়িতে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (Bangladesh Folk Art and Craft Foundation) প্রতিষ্ঠা করেন। পানাম নগরীর ঠাকুরবাড়ি ভবন ও ঈশা খাঁর তোরন এই দুই স্থাপনাকে একত্রে নিয়ে প্রায় ১৬ হেক্টর জায়গা জুড়ে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন বিস্তৃত। এই ফাউন্ডেশনে আছে গোপীনাথ সাহা সরদার বাড়ি, জয়নুল আবেদীনের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ভাস্কর্য, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের আবক্ষ ভাস্কর্য, জয়নুল আবেদীনের ভাস্কর্য, জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘর, লোকজ মঞ্চ, সেমিনার রুম, কারুশিল্প গ্রাম এবং সবুজে মোড়া সুবিশাল উদ্যান।
প্রায় ৪৫০০-এর অধিক প্রাচীন নির্দশন স্থান পেয়েছে জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘরে। আছে বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার প্রাচীন শিল্পীদের সুনিপুণ হাতের তৈরী বিভিন্ন শৈল্পিক ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য নানা পণ্য সামগ্রী। দক্ষ শিল্পীরা প্রতিটি সৃষ্টিতে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রাচীন বাংলার গ্রামীন ঐতিহ্য। এছাড়া জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারিগুলোতে দেখা মিলবে কাঠে খোদাই করা বিভিন্ন কারুশিল্প, পটচিত্র, মুখোশ, আদিম জীবনভিত্তিক নিদর্শন, লোকজ বাদ্যযন্ত্র, পোড়ামাটির ফলক, লোহা তামা-কাসা-পিতলের তৈজসপত্র, লোকজ অলংকারসহ বৈচিত্রপূর্ণ অনেক প্রাচীন নিদর্শন।
প্রতিবছর শীতকালে এখানে মাসব্যাপী লোকশিল্প মেলা হয়ে থাকে। এছাড়া অনেক সময় পহেলা বৈশাখের আগেও এই ধরনের লোকশিল্প মেলা আয়োজন করা হয়। গ্রামীণ আবহে পূর্ণ মেলায় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক জামদানীর হাট ছাড়াও গজা, মুড়ি মুড়কি ইত্যাদি বিভিন্ন গ্রামীণ অনুষঙ্গ পাওয়া যায়।
সময়সূচী ও প্রবেশ ফি
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে। এছাড়া সপ্তাহের বাকি দিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। তবে বিশেষ সরকারি ছুটির দিন গুলো যেমন ঈদ, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারী, পহেলা বৈশাখ, জাতীয় শোক দিবসে খোলা থাকে।
সোনারগাঁও জাদুঘরের প্রবেশ টিকেট ফি ৫০ টাকা জনপ্রতি, বিদেশী দর্শনার্থীদের জনে ১০০ টাকা। তবে ছাত্রছাত্রীরা জনপ্রতি ৩০ টাকায় প্রবেশ করতে পারেন। এছাড়া বড় সর্দারবাড়ি প্রবেশ ফি ১০০ টাকা, বিদেশীদের জন্যে ২০০ টাকা।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা হতে নিজস্ব পরিবহণ যেমন প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস নিয়ে সরাসরি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও যেতে পারবেন। যদি লোকাল যানবাহনে যেতে চান তাহলে গুলিস্তান থেকে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় যাবার বিভিন্ন কাউন্টার সার্ভিস বাস পাবেন। এক্ষেত্রে স্বদেশ কিংবা দোয়েলকে বেছে নিতে পারেন। এছাড়া আপনার পছন্দমতো বাসে চড়ে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় নেমে রিক্সা বা সিএনজি ভাড়ায় লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে যেতে পারবেন।
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।