হাওরের দুইপাশে মাঝে রাস্তা, রাস্তার দুই পাশেবয়ে চলা রাস্তা এমন কিছু দেখতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখোলা। করিমগঞ্জ এর রৌয়া থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘের নিয়ামতপুর – বালিখলা রাস্তা অপার সৌন্দর্য মেলে ধরে বয়ে চলেছে হাওরের মাঝ দিয়ে । বেশ উচু হওয়ায় পানিতে ডুবে যায় না এই রাস্তা। সেই সাথে আছে হাওরে নৌ ভ্রমণের সুযোগ সুবিধা। ঢাকা ও আশপাশ থেকে একদিনেই ঘুরে আসা সম্ভব। বালিখলা রাস্তা নিয়ে আমাদের ভিডিও গাইড দেখতে এইখানে ক্লিক করুন।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ : প্রথমেই আপনাকে কিশোরগঞ্জ জেলা সদরে চলে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ট্রেনে সকালের এগারোসিন্ধুর প্রভাতীতে আসলে সুবিধা হবে। ট্রেন ভাড়া শ্রেণী অনুযায়ী ১২০-২০০, সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা ২০ মিনিট। ট্রেন ষ্টেশন থেকে একরামপুর সিএনজি স্ট্যান্ড ১৫-২০ টাকা রিকসা ভাড়ায় চলে আসলে সুবিধা হবে।
বাসে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ : বাসে আসতে চাইলে মহাখালী থেকে অনন্যা পরিবহণ বা অনন্যা ক্লাসিক এবং গোলাপবাগ (সায়েদাবাদ) থেকে আসতে চাইলে যাতায়াত বা অনন্যা সুপারে সরাসরি কিশোরগঞ্জ আসতে পারেন। বাস ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। মহাখালী থেকে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা এবং গোলাপবাগ থেকে সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘন্টা। বাস স্ট্যান্ড থেকে লোকাল (১৫টাকা) বা রিসার্ভ ইজিবাইকে (১২০ টাকা) চলে আসুন একরামপুর সিএনজি স্ট্যান্ডে।
কিশোরগঞ্জ থেকে বালিখোলা : কিশোরগঞ্জ শহর থেকে এই বালিখোলার দূরত্ব প্রায় ১৯ কিলোমিটার। কিশোরগঞ্জ শহরের একরামপুর সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি রিসার্ভ করে ১ ঘন্টায় চলে যেতে পারবেন বালিখোলায়। ভাড়া লাগবে ২৫০ – ৩০০ টাকা। ইজিবাইকেও যেতে পারবেন সেইক্ষেত্রে সময় একটু বেশী লাগবে। এছাড়া লোকাল ওয়েতে যেতে চাইলে একরামপুর থেকে চামটা বন্দর গামী যে কোন সিএনজিতে উঠে নেমে যান নিয়ামতপুর বাজারে। সেখানে থেকে ইজিবাইকে ১ কিলো দূরত্বে বালিখোলা রাস্তায় চলে যেতে পারবেন। পুরো রাস্তা প্রায় ৩ কিলোমিটার। রাস্তার শেষ মাথায় বালিখোলা বাজার। সেখানে নৌকা দিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
একদিনে সম্ভব?
ঢাকা বা এর আশেপাশ থেকে আসলে একদিনেই ঘুরে দেখা সম্ভব। তবে এই জন্যে খুব সকালে রওনা দিতে হবে। ঢাকা থেকে আসলে সকালের ট্রেনে অথবা সকালে মহাখালী থেকে অনন্য পরিবহণ বাসে সকাল ৭টার আগেই রওনা দিলে সুবিধা হবে। তাহলে ১০-১১টার মধ্যেই কিশোরগঞ্জ চলে আসতে পারবেন। তবে যেভাবেই আসেন ফিরতি পথে আপনাকে বাসেই ফিরতে হবে। কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা যাবার শেষ বাস সন্ধ্যা ৬ঃ৫০ মিনিটে। তাই সময়ের দিকে আপনার খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া আরেকটা অপশন আছে, বালিখোলা থেকে ৩ কিলো দূরে চামড়া/চামটা বন্দর চলে যান (সেটাও দেখার মত জায়গা)। চামটা বন্দরে সরাসরি ঢাকার বাস আছে। তবে এই বাস গুলোর সার্ভিস বেশ তুলনামূলক বেশ খারাপ। কিশোরগঞ্জ শহরে আসার সময়ের সল্পতা যদি থাকে তাহলে এই অপশন ব্যবহার করতে পারেন।
আর কি করার আছে?
আপনার হাতে কেমন সময় আছে সেই হিসেব অনুযায়ী ঘুরে দেখুন। বালিখোলা রাস্তার শেষ প্রান্তে হাওরে ঘুরার জন্যে নৌকা পাওয়া যায়। নৌকার সাইজ অনুযায়ী ঘন্টা প্রতি ৩০০-৫০০ টাকায় হাওরে ঘুরতে পারবেন। চাইলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বাড়ি মিঠামইন ঘুরতে পারেন। তাহলে হাওর ভ্রমণ ও হবে আর মিঠামইন ঘুরে দেখাও হবে। বালিখোলা বাজার থেকে নৌকায় মিঠামইন যাওয়া আসা করতে ৩ ঘন্টার মত লাগবে। আর সময় থাকলে কিশোরগঞ্জ শহরের লেকসিটি পার্ক, পাগলা মসজিদ, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ঘুরে দেখুন।
কোথায় খাবেন
বালিখোলায় খাওয়ার ব্যবস্থা নাই। কয়েকট টং দোকান আছে। সেখানে হালকা নাস্তা করতে পারবেন। ভারি খাবারের জন্যে ভাল হবে কিশোরগঞ্জ শহরেই খেয়ে নেওয়া অথবা যাত্রাপথে করিমগঞ্জ বাজারে খেয়ে নেওয়া। চামটা/চামড়া বন্দর গেলে সেখানেও মোটামুটি মানের খাওয়ার হোটেল আছে।
কোথায় থাকবেন
যদি আপনার রাতে থাকার প্রয়োজন হয় তাহলে কিশোরগঞ্জ শহরে মোটামুটি মানের আবাসিক হোটেল আছে সেখানে থাকতে পারবেন ৮০০-১২০০ টাকা খরচ করে।
যাওয়ার উপযুক্ত সময়
যে কোন হাওর এলাকা ভ্রমণের সবচেয়ে ভাল সময় বর্ষাকাল। তাই এই রাস্তার সৌন্দর্য ও হাওরের রূপ উপভোগ করতে চাইলে বর্ষায় ভ্রমণ করুন। সাধারণত জুলাই-আগস্ট মাস সবচেয়ে ভাল সময়।
সতর্কতা
হাওর ভ্রমণে সতর্ক থাকবেন, সাতার না জানলে পানিতে নামবেন না। সবচেয়ে ভাল হয় সাথে লাইফ জ্যাকেট থাকলে। আর একদিনে ভ্রমণ করতে চাইলে সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।