বাগেরহাট জেলার সুন্দরঘোনায় ষাট গম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে পুরাতন রূপসা রোডে বাগেরহাট জাদুঘর (Bagerhat Museum) অবস্থিত। ১৯৭৩ সালে মুসলিম সংস্কৃতি ও খানজাহান আলীর স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক আবেদন জানানো হলে ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো-বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ৫২০ বর্গ মিটার জায়গা জুড়ে এই জাদুঘরটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর বাগেরহাট জাদুঘর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

ষাট গম্বুজ মসজিদের সাথে অবস্থিত জাদুঘর ভবন নির্মাণে ইসলামি স্থাপত্য কলা প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ৩টি গ্যালারি বিশিষ্ট দক্ষিণমুখী জাদুঘরে বাগেরহাটের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখার পাশাপাশি বাগেরহাটের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের সুযোগ রয়েছে। সারাদেশের মসজিদ ও পুরাতাত্ত্বিক স্থাপত্যের ছবি এবং খান জাহান আলীর ঐতিহাসিক কুমিরের মমি বাগেরহাট জাদুঘরের বিশেষ আকর্ষণ। এছাড়া উল্লেখযোগ্য নিদর্শনের মধ্যে আছে বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন, মুদ্রা, বাসন, তৈজসপত্র, মানচিত্র এবং লিপিবদ্ধ ইতিহাস।

প্রবেশ মূল্য ও সময়সূচি

গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ও শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বাগেরহাট জাদুঘর খোলা থাকে। আর প্রতিদিন দুপুর ১ টা থেকে ১ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সাময়িক বিরতিতে জাদুঘর বন্ধ থাকে। সপ্তাহের রবিবার পূর্ণ দিবস এবং প্রতি সোমবার বেলা অর্ধ দিবসের জন্য জাদুঘর বন্ধ থাকে।

বাগেরহাট জাদুঘরে প্রবেশ টিকেটের মূল্য ১৫ টাকা। তবে ৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চারা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পাড়ে। সার্কভুক্ত বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ ফি ৫০ টাকা এবং অন্যান্য সকল বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ ফি ১০০ টাকা।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাস ও ট্রেনে বাগেরহাটে যাওয়া যায়। বাসে চড়ে বাগেরহাট যাওয়ার দুইটি রুট রয়েছে। মানিকগঞ্জের আরিচা ফেরিঘাট এবং ঢাকার গুলিস্থান বা সায়েদাবাদ থেকে মাওয়া ফেরিঘাট হয়ে মেঘনা, শাকুরা, পর্যটক, হানিফ, সোহাগ ও ঈগল পরিবহণের বাসে চড়ে বাগেরহাট যেতে পারবেন। বাস ভেদে ভাড়া লাগবে ৫০০-১২০০ টাকা। আবার ঢাকার কমলাপুর থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, চিত্রা, রূপসা বা সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা হয়ে বাগেরহাট যাওয়া যায়। বাগেরহাট পৌঁছে অটো রিকশা বা লোকাল বাসে ৫.৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাগেরহাট জাদুঘরে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

বাগেরহাট শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলের মধ্যে মমতাজ হোটেল, হোটেল মোহনা, হোটেল আল আমিন, রেসিডেন্সিয়াল হোটেল, হোটেল অভি, হোটেল ফুয়াদ আবাসিক, জারিফ আবাসিক ও হোটেল ধানসিঁড়ি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সার্কিট হাউজ, ডাক বাংলো, ষাট গম্বুজ প্রত্নতত্ব গেস্ট হাউজ ও সুন্দরবন রিসোর্টে রাত্রিযাপনের সুযোগ রয়েছে।

কোথায় খাবেন

বাগেরহাটে সুস্বাদু খাবারের জন্য রাধুনি ও ধানসিঁড়ি হোটেলের বেশ সুনাম রয়েছে। বাগেরহাট জেলায় নারিকেল চিংড়ি একটি জনপ্রিয় খাবার।

বাগেরহাট জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান : বাগেরহাটের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে ষাট গম্বুজ মসজিদ, খান জাহান আলীর মাজার, মংলা বন্দর, চন্দ্রমহল ইকো পার্ক, দুবলার চর ও নয় গম্বুজ মসজিদ উল্লেখযোগ্য।

ফিচার ইমেজ: রাজু আহমেদ

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে

ম্যাপে বাগেরহাট জাদুঘর

শেয়ার করুন সবার সাথে

ভ্রমণ গাইড টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ পাতায় যোগাযোগ করুন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ গাইড দায়ী থাকবে না।