মুন্সিগঞ্জ জেলার মীরকাদিমের দরগাবাড়ী গ্রামে কাফুরশাহ্ কর্তৃক নির্মিত ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট বাবা আদম মসজিদ (Baba Adam Mosque) অবস্থিত। সুদূর আরবে জন্ম নিয়েও ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে সাধক বাবা আদম শহীদে (রাঃ) ভারতবর্ষে পদার্পণ করেন। পরবর্তীতে ১১৭৮ সালে সেন শাসনামলে তিনি মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিমে আগমণ করেন। সেই সময় মুন্সিগঞ্জ ছিল বল্লাল সেনের রাজত্বে। স্থানীয় যুদ্ধে অত্যাচারী হিন্দু রাজা বল্লাল সেনের হাতে প্রাণ হারান এই সাধক। শহীদ বাবা আদমের মৃত্যুর ৩১৯ বছর পর ১৪৮৩ সালে বাবা আদম মসজিদ নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৫৩০ বছর ধরে ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই মসজিদটি পুরাকালের আত্নত্যাগী বাবা আদমের স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেয়।
মুসলিম স্থাপত্য শৈলীতে লাল পোড়ামাটির নকশাকৃত ইটের ব্যবহারে নির্মিত মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪৩ ফুট ও প্রস্থ ৩৬ ফুট। ৬ টি গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের অভ্যন্তরীন অংশের পশ্চিম দেয়ালে অর্ধ বৃত্তাকার কারুকাজ খচিত অবতল মেহরাব ও চার কোনায় গ্রানাইট পাথরের নির্মিত চারটি অষ্টভুজাকৃতির অলংকৃত মিনার রয়েছে। মসজিদের সম্মুখভাগের তিনটি খিলানাকৃতির প্রবেশ পথের মধ্যে বর্তমানে কেবল মাঝখানের পথটিই ব্যবহৃত হয়। কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের দুইপাশে প্রাচীন চিত্র ফলকের কাজ নজর কাড়ার মতো। এছাড়া মসজিদের পূর্ব দেয়ালের ওপরের দিকে ফারসি ভাষায় খোঁদাই করা কালো পাথরের ফলক রয়েছে। মসজিদের দক্ষিন পূর্ব কোণে আছে বাবা আদমের মাজার।
১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহ্যবাহী বাবা আদম মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে আনা হয় এবং ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই মসজিদের ছবি দিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। বছর জুড়ে দেশ বিদেশের অসংখ্য দর্শনার্থীরা এই মসজিদ দেখতে আসেন।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক পথে মুন্সিগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। ঢাকার গুলিস্থান, আবদুল্লাপুর বা মিরপুর থেকে মাওয়াগামী বাসে চড়ে মুন্সিগঞ্জে যাওয়া যায়। মুন্সিগঞ্জ হতে রিকশা নিয়ে ৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই বাবা আদম মসজিদ পৌঁছে যাবেন।
চাইলে নৌপথে মুন্সিগঞ্জ যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ঢাকার সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে মুন্সিগঞ্জগামী লঞ্চে চড়ে বসুন। এরপর মুন্সিগঞ্জ থেকে রিকশা নিয়ে সরাসরি চলে যান বাবা আদম মসজিদে।
কোথায় থাকবেন
একদিনে ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জ ঘুরে ফিরে আসা যায়। তবুও রাত্রিযাপনের প্রয়োজনে জেলা সদরে অবস্থিত হোটেল থ্রি স্টার, হোটেল কমফোর্ট সহ বেশকিছু আবাসিক হোটেল পাবেন। মুন্সিগঞ্জের আকর্ষণীয় রিসোর্টের মধ্যে পদ্মা, মাওয়া ও মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্ট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন
মুন্সিগঞ্জে ভালো মানের খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে। মুন্সিগঞ্জের চিত্তর দই, আনন্দর মিষ্টি, খুদের বৌউয়া (খুদের খিচুড়ি) এবং ভাগ্যকুলের মিষ্টি বেশ জনপ্রিয় খাবার।
মুন্সিগঞ্জের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
মুন্সিগঞ্জের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে জগদীশ চন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর, ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ী ও মাওয়া ফেরি ঘাট উল্লেখযোগ্য।
ফিচার ইমেজ: চৌধুরী সামিরুল কাদের
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।