বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, সেই সুবাদে জলপথে ভ্রমণের আছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। অতীতে বৃটিশ কতৃক নির্মিত বেশকিছু প্যাডেল স্টিমার ঢাকা-কলকাতা নৌরুটে চলাচল করতো। পরবর্তীতে ঢাকা-কলকাতা রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্টিমারগুলো ঢাকা হতে খুলনা পর্যন্ত যাতায়াত করে। বর্তমানে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় ঢাকার বুড়িগঙ্গা থেকে দেশের প্রধান প্রধান নদী পেরিয়ে এসব প্যাডেল স্টিমার বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত চলাচল করছে।
প্রায় শতবর্ষ পুরনো এই স্টিমারগুলোতে জ্বালানী হিসেবে কয়লা ব্যবহৃত। আশির দশকের শুরুতে কয়লার পরিবর্তে ডিজেল ইঞ্জিনে রূপান্তরিত করা হয়। দুইটি বড় বড় প্যাডেলের সাহায্যে লঞ্চটি সামনের দিকে এগিয়ে যায় বলে প্যাডেল স্টিমার নামকরন করা হয়। তবে তৎকালীন সময়ে দ্রুতগতির কারণে স্টিমারগুলো রকেট স্টিমার নামে অধিক পরিচিতি লাভ করে।
বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে অবশিষ্ট অল্পকিছু প্যাডেল স্টিমারের মধ্যে ৫টি রয়েছে বাংলাদেশে। পিএস অস্ট্রিচ (১৯২৯), পিএস মাসুদ (১৯২৮), পিএস লেপচা (১৯৩৮), পিএস টার্ন (১৯৫০) এবং এমভি শেলা (১৯৫১) নামের স্টিমারগুলো ঢাকা-খুলনা নৌরুটে বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি)-র অধীনে চলাচল করে। এমধ্যে সবচেয়ে বড় হলো ‘মাসুদ’ এবং ‘অস্ট্রিচ’৷ আজ থেকে প্রায় নব্বই বছর আগে ১৯২৮ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে প্যাডেল স্টিমার পিএস মাসুদ তৈরি করা হয়।
সময়সূচী
প্যাডেল স্টিমারগুলো ঢাকা নদী বন্দর সদরঘাটের ১৬ নং পল্টুন লালকুঠির ঘাট থেকে সপ্তাহে ৪ দিন সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে ছেড়ে যায়। বাকি দুইদিন এমভি বাঙালি ও এমভি মধুমতি জাহাজ চলাচল করে।
স্টিমার জাহাজের নাম | ঢাকা থেকে ৬টা ৩০ মিনিট | বরিশাল, মোড়লগঞ্জ থেকে ৯টা ৩০ মিনিট |
এমভি মধুমতি | সোমবার | বুধবার/Wednesday |
এমভি বাঙালী | বৃহস্পতিবার/Thursday | শনিবার/Saturday |
পিএস মাসুদ | শনিবার / বৃহস্পতিবার/ Saturday / Thursday | সোমবার /বৃহস্পতিবার /Monday / Thursday |
পিএস অসট্রিচ | রবিবার / বুধবার/ Sunday / Wednesday | মঙ্গলবার / শুক্রবার/Tuesday / Friday |
পিএস টার্ন/ল্যাপচা | শুক্রবার/ Friday | রবিবার/Sunday |
উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে প্রতি শুক্রবার স্টিমার বন্ধ থাকে। আর মোড়লগঞ্জ বা খুলনা থেকে প্রতি রবিবার স্টিমার বন্ধ থাকে।

প্যাডেল স্টীমার চলাচলের রুট
ঢাকা – চাঁদপুর – বরিশাল – ঝালকাঠি – কাউখালী – হুলারহাট – চরখালী – বড় মাছুয়া (মঠবাড়িয়া) – সান্ন্যাসি – মোড়লগঞ্জ। প্রতি বুধবার মংলা হয়ে খুলনা পর্যন্ত যায়। ঢাকা হতে যাত্রা শুরু করে খুলনা পৌঁছাতে প্রায় ১ দিন সময় লাগে।
ঢাকা থেকে যাত্রার সময় | খুলনা থেকে যাত্রার সময় |
সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ মিনিট | খুলনা থেকে ভোর ২ টা ৪৫ মিনিট |
চাঁদপুর থেকে রাত ১১ টা | মংলা থেকে সকাল ৬ টা |
বরিশাল থেকে সকাল ৬ টা | মোড়েলগঞ্জ থেকে সকাল ৯ টা ৩০ মিনিট |
ঝালকাঠি থেকে সকাল ৮ টা | সন্যাসী থেকে সকাল ১০ টা |
কাউখালী থেকে সকাল ৯ টা ৩০ মিনিট | মাছুয়া থেকে বেলা ১১ টা |
হুলার হাট থেকে বেলা ১০ টা | চরখালি থেকে দুপুর ১ টা |
চরখালি থেকে বেলা ১১ টা ৩০ মিনিট | হুলার হাট থেকে দুপুর ২ টা |
মাছুয়া থেকে দুপুর ১ টা | কাউখালী থেকে দুপুর ২ টা ৩০ মিনিট |
সন্যাসী থেকে দুপুর ২ টা | ঝালকাঠি থেকে বিকেল ৪ টা |
মোড়েলগঞ্জ থেকে বেলা ৩ টা | বরিশাল থেকে সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ মিনিট |
মংলা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা | চাঁদপুর থেকে রাত ১ টা |
খুলনা পৌঁছায় রাত ৮ টা ৩০ মিনিট | ঢাকায় পৌঁছায় সকাল ৬ টা |
টিকেটের মূল্য
প্যাডেল স্টিমারে প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণির কেবিন ও তৃতীয় শ্রেণির ডেক সার্ভিস রয়েছে।
গন্তব্য | প্রথম শ্রেণি | দ্বিতীয় শ্রেণি | তৃতীয় শ্রেণি |
ঢাকা থেকে চাঁদপুর | ৪০০ টাকা | ২৪০ টাকা | ১০০ টাকা |
ঢাকা থেকে বরিশাল | ১০০০ টাকা | ৬৩০ টাকা | ২৫০ টাকা |
ঢাকা থেকে ঝালকাঠি | ১১৯০ টাকা | ৭৬০ টাকা | ২৭০ টাকা |
ঢাকা থেকে কাউখালী | ১২৪৫ টাকা | ৮৪০ টাকা | ২৮০ টাকা |
ঢাকা থেকে হুলারহাট | ১৩৮০ টাকা | ৮৫৫ টাকা | ৩০০ টাকা |
ঢাকা থেকে চরখালী | ১৪২৫ টাকা | ৮৮৫ টাকা | ৩২০ টাকা |
ঢাকা থেকে বড় মাছুয়া | ১৫৯৫ টাকা | ১০১০ টাকা | ৩৫০ টাকা |
ঢাকা থেকে মোড়েলগঞ্জ | ১৬১৫ টাকা | ১০৫০ টাকা | ৩৬০ টাকা |
যোগাযোগ
প্যাডেল স্টিমারের টিকেট বুকিং করতে +88-02-9667973 এবং 01711-103922
সরাসরি টিকিট সংগ্রহ করার ঠিকানা
বিআইডব্লিউটিসি (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন)
ফেয়ারলী হাউস : ২৪ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ
বাংলামটর, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০।
খাবার ব্যবস্থা
প্যাডেল স্টিমারে কেন্টিনের খাবার খেতে হলে আগেই অর্ডার দিতে হয়। অর্ডার দেয়ার পর খাবার রান্না করা হয়। চাইলে জনপ্রতি ২২০ টাকার খাবার প্যাকেজ নিতে পারেন। এছাড়া এখানে স্ন্যাক্স হিসাবে কোরাল মাছ, চিকেন ফ্রাই সহ বিভিন্ন খাবার। খাবার সাথে নিয়ে গেলে বা পরিবহন করলে প্লেট-গ্লাস-বাটি ব্যবহার করতে চাইলে জনপ্রতি ৫০ টাকা প্রদান করতে হয়।
পরামর্শ
যদি কেবিনে ভ্রমণ করতে চান তবে অবশ্যই অগ্রিম টিকেট কেটে রাখুন। এসি কেবিনের টিকেট বাংলামটরে অবস্থিত “BIWTC” এর অফিস হতে কাটতে পারবেন। নন এসি কেবিনের টিকেট সদরঘাট অথবা অনলাইনে থেকে কাটা যায়।
ফিচার ইমেজ: সাইফুল ইসলাম খান
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।