চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত কুমিল্লা (Comilla) জেলা খাদি কাপড় ও রসমালাইয়ের জন্যে সারা বিশ্বে সমাদৃত। শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতির পাদপীঠ কুমিল্লা জেলায় রয়েছে বেশকিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং দর্শনীয় স্থান। উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ স্থানের মধ্যে রয়েছে ময়নামতি ওয়্যার সিমেট্রি, ম্যাজিক প্যারাডাইস, ধর্মসাগর দীঘি, বার্ড, লালমাই পাহাড়, শালবন বৌদ্ধ বিহার, ফান টাউন, ডায়নো পার্ক এবং ব্লু ওয়াটার পার্ক।

বাস বা ট্রেনে ঢাকা হতে কুমিল্লা যেতে মাত্র দুই ঘন্টা সময় লাগে। আর তাই ঢাকা থেকে একদিনের ভ্রমণ গন্তব্য হিসাবে কুমিল্লা অনেক জনপ্রিয়। এছাড়া চট্টগ্রাম, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়গঞ্জ, নরসিংদি এর মত কুমিল্লার কাছের জেলা গুলো থেকে খুব সকালে রওনা হয়ে সারাদিন কুমিল্লা ঘুরে ফিরে আসতে পারবেন। ভ্রমণ গাইডের এই ট্যুর প্লানে থাকচে একদিনে কুমিল্লা ভ্রমণের সকল তথ্য।

যেভাবে একদিনে কুমিল্লা ঘুরে দেখবেন

ঢাকা হতে বাস বা ট্রেনে চড়ে সহজেই কুমিল্লা যেতে পারবেন। বাসে কুমিল্লা ক্যান্টনম্যান্ট এসে সেখান থেকে অটোতে চড়ে অথবা ১০ মিনিট পায়ে হেটে চলে যান ময়নামতি ওয়্যার সিমেট্রি দেখতে। যদি ওয়্যার সেমেট্রি দেখতে না চান তবে বাস হতে ক্যান্টনমেন্ট অথবা কোটবাড়ি বাসস্ট্যান্ড নামুন। কোটবাড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে শালবন বিহার অবস্থিত। শালবন বিহার পর্যন্ত সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। ময়নামতি শালবন বিহারের দুইটি পিকনিক স্পট ঘুরে ১৫ টাকা রিকশা ভাড়ায় চলে যান ব্লু ওয়াটার পার্ক অথবা ম্যাজিক পারাডাইস পার্কে।

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, কুমিল্লা
ওয়্যার সিমেট্রি; ছবিঃ এম এম রহমান

তারপর একে একে লালমাই পাহাড়, বৌদ্ধ মন্দির, ব্লু ওয়াটার পার্ক, ম্যাজিক প্যারাডাইস, ফান টাউন, ময়নামতি জাদুঘর দেখে ১০ টাকা অটো ভাড়ায় ইটাখোলা মোড়ে চলে আসুন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সময় অতিবাহিত করে ইজিবাইকে চড়ে বার্ডে পৌঁছে দুপুরের খাবার সেরে নিতে পারেন। বার্ডে রয়েছে নীলাচল পাহাড় এবং দীপু নাম্বার টু মুভির চিত্রায়নে ব্যবহৃত পানির ট্যাংক।

শালবন বৌদ্ধ বিহার, ময়নামতি, কুমিল্লা
শালবন বিহার; ছবিঃ জাহিদুল হক

শালবন বিহার, বৌদ্ধ মন্দির, ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক, রুপ সাগর পার্ক, ব্লু ওয়াটার পার্ক, ডায়নো পার্ক এবং ফান টাউনে প্রবেশ ফি যথাক্রমে ২০, ২০, ২০০, ৫০, ১০০, ১০০ এবং ১০০ টাকা। উপরের স্থানগুলো ঘুরে যদি হাতে আরো সময় অবশিষ্ট থাকে তবে ধর্মসাগর দীঘী, রানী কুঠির প্রাসাদে কিছুটা সময় ব্যয় করতে পারেন। বিশ্বরোড কোটবাড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে ধর্মসাগর যেতে জনপ্রতি ২০ টাকা সিএনজি ভাড়া লাগে।

সারাদিন ঘুরে ফিরে কুমিল্লার আসল মাতৃভান্ডারের (Comilla Original Matri Bhandar) রসমালাই চেখে দেখতে চাইলে বিশ্বরোড হতে ২০ টাকা অটো ভাড়ায় কান্দিরপাড় এসে রিকশায় চড়ে মনোহরপুর চলে আসুন।

কুমিল্লার সকল জায়গা গুলোর বিস্তারিত জানতে পড়ে নিন কুমিল্লা জেলা দর্শনীয় স্থান সমূহ।

ঢাকা থেকে কুমিল্লা কিভাবে যাবেন

দিনে গিয়ে ঢাকা থেকে কুমিল্লা ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যে পূনরায় ঢাকায় ফিরতে চাইলে অন্তত সকাল সাতটার মধ্যে রওনা দিন। যাত্রাবাড়ি থেকে কুমিল্লাগামী এসি/নন-এসি বাসের ভাড়া ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। কমলাপুর ও সায়েদাবাদ থেকে তিশা, এশিয়া লাইন, রয়েল, প্রিন্স, স্টার লাইন অথবা বি আর টিসি বাসে জনপ্রতি নন-এসি ২০০ টাকা এবং এসি ২৫০ টাকা ভাড়ায় কুমিল্লা যেতে পারবেন।

এছাড়া ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর থেকে ট্রেনে করে সহজেই কুমিল্লা আসতে পারবেন। চট্টগ্রামগামী সুবর্ণা ও সোনার বাংলা বাদে প্রায় সকল ট্রেনই কুমিল্লা স্টেশনে থামে। ঢাকা থেকে কুমিল্লা জনপ্রতি ভাড়া ৯০-২৫০ টাকা। তবে সেই ক্ষেত্রে এমন কোন ট্রেনে আসতে পারে যা দিয়ে আপনি সকালের মধ্যেই কুমিল্লা পৌছতে পারেন।

(বিঃ দ্রঃ সকল প্রকার পরিবহণ ভাড়া সময়ানুপাতে পরিবর্তিত হতে পারে।)

ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে

শেয়ার করুন সবার সাথে

ভ্রমণ গাইড টিম সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান অথবা আমাদের সাথে যোগাযোগ পাতায় যোগাযোগ করুন।
দৃষ্টি আকর্ষণ : যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই ভ্রমণ গাইডে প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে ভ্রমণ গাইড দায়ী থাকবে না।