বাংলাদেশে ভ্রমণ প্রেমীদের কাছে আকর্ষণের শীর্ষে রয়েছে কক্সবাজারের নাম। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের অধিকারী এই জেলার পাহাড়, নদী, ঝর্ণা ও দ্বীপের অপূর্ব মেলবন্ধনে দেশি বিদেশি পর্যটক মোহিত হয়। আর ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সমুদ্র সৈকতে উত্তাল ঢেউয়ের আছড়ে পড়া কিংবা মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্থের দৃশ্য যেন নিষিদ্ধ মায়াজাল থেকেও কোন অংশে কম নয়। ভ্রমণ গাইডের আজকের আয়োজনে চলুন জেনে নেই কক্সবাজার ভ্রমণের পূর্ণাঙ্গ ট্যুর প্ল্যান, যাবার উপায়, থাকবেন কোথায়, কোথায় খাবেন ইত্যাদি সকল টুকিটাকি বিষয়।
প্ল্যান এক : ২ দিন ১ রাত
দুই দিন এক রাতের প্ল্যানে যে সব জায়গা ঘুরে দেখবেন-
- কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত (লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী বীচ)
- মেরিন ড্রাইভ
- দরিয়া নগর
- হিমছড়ি
- ইনানী সমুদ্র সৈকত
- রামু অথবা মহেশখালী (আদিনাথ মন্দির, রাখাইন পাড়া ও স্বর্ণ মন্দির)
১ম দিনঃ
যেহেতু হাতে ২ দিন ১ রাত সময় তাই রাতের বাসে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিন। কক্সবাজার পৌঁছে ১১ টার মধ্যে হোটেলে চেক ইন করুন। চেক ইন করে চলে যান সমুদ্র দর্শনে। ঘন্টাখানেক সমুদ্রের জলে গা ভিজিয়ে ছবি তুলে ২ টার মধ্যে হোটেলে ফিরে আসুন। দুপুরের খাবার নিজ হোটেলে কিংবা কাছের কোন রেস্টুরেন্ট থেকে করে নিন। খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে আবার বের হয়ে যান সমুদ্র দর্শনে। সারা বিকেল সন্ধ্যা বীচে কাটিয়ে হোটেলে ফিরে আসুন অথবা সন্ধ্যার পরে বার্মিজ মার্কেটে ঢু মারতে পারেন। রাতে খাবারের জন্যে বেছে নিতে পারেন রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, নিরিবিলি, বোগদাদিয়ার মত রেস্টুরেন্ট কিংবা পছন্দমত কোন রেস্টুরেন্ট। কক্সবাজারের ঝাউতলার দিকে গেলে সেখানে অবস্থিত রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড এক ফাঁকে ঘুরে দেখে নিতে পারেন। ভোরের সূর্যোদয় দেখতে চাইলে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যান।
২য় দিনঃ
ভোরের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত অন্যরকম সুন্দর। এই সৌন্দর্য দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন না। ভোরে উঠে চলে যান সৈকতে। অন্যরকম সমুদ্র সৈকতের দেখা পাবেন। ফিরে এসে সকালের নাস্তা করে নিন। আজ সারাদিনের সময় দুই ভাগে ভাগ করে নিতে পারেন। সকালে হয় মহেশখালি অথবা রামু থেকে ঘুরে আসা এবং বিকেলে হিমছড়ি ও ইনানী বীচ ঘুরে আসা। আর যদি সকালে ঘুরে বেড়াতে না চান তাহলে শুধু বিকেলে মেরিন ড্রাইভ হয়ে হিমছড়ি ও ইনানীর দিক থেকে ঘুরে আসুন।

সকালে মহেশখালি যেতে চাইলে যত তাড়াতাড়ি পারেন রওনা হয়ে যান। মহেশখালি মোটামুটি ঘুরে আসতে প্রায় ৪ ঘন্টার মত সময় লাগবে। তাই সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমে চলে যান মহেশখালি ট্রলার ঘাটে। যেকোন অটোচালককে বললেই হবে মহেশখালি যাবেন। ট্রলার ঘাট হতে চাইলে স্পীডবোট রিজার্ভ নিতে পারবেন অথবা লোকাল ট্রলারে যেতে পারবেন। মহেশখালি ঘুরে দেখে দুপুরের আগে আগে কক্সবাজার ফিরে আসুন। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে অটো বা সিএনজিতে চড়ে বেরিয়ে পড়ুন হিমছড়ির উদ্দেশ্যে। হিমছড়ি ও ইনানী ঘুরে দেখতে ৩-৪ ঘন্টা সময় হাতে রাখতে হবে। হিমছড়ির ঝর্ণা দেখে ঘুরাঘুরি শেষ করে ইনানী বিচে সূর্যাস্থ দেখতে চলে যান। সূর্যাস্থ দেখে কক্সবাজার ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। কেনাকাটার প্রয়োজন হলে শেষ বারের মত আবার বার্মিজ মার্কেটে ঢু মারতে পারেন। অতঃপর আপনার বাসের সময় অনুযায়ী বের হয়ে যান। ফিরে চলুন আপনার গন্তব্যে।
কক্সবাজার ভ্রমণ নিয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে পড়ুন: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
প্ল্যান দুই : ৩ দিন ২ রাত
তিন দিন ও দুই রাতের প্ল্যানে যে সব জায়গা ঘুরে দেখবেন-
- কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত (লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী বীচ)
- রামু (বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার)
- মেরিন ড্রাইভ
- দরিয়া নগর
- হিমছড়ি
- ইনানী সমুদ্র সৈকত
- রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড
- মহেশখালী (আদিনাথ মন্দির, রাখাইন পাড়া ও স্বর্ণ মন্দির)
১ম দিনঃ
ঢাকা হতে রাতের বাসে কক্সবাজার এসে ১১ টার মধ্যে রুম বুকিং দিয়ে সমুদ্র দেখতে চলে যান। ঘন্টাখানেক সমুদ্রের জলে গা ভিজিয়ে ছবি তুলে ২ টার মধ্যে হোটেলে ফিরে আসুন। দুপুরের খাবার নিজ হোটেলে কিংবা কাছের কোন রেস্টুরেন্ট থেকে করে নিন। খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে আবার বের হয়ে যান সমুদ্র দর্শনে। সারা বিকেল সন্ধ্যা বীচে কাটিয়ে হোটেলে ফিরে আসুন অথবা সন্ধ্যার পরে বার্মিজ মার্কেটে ঢু মারতে পারেন। রাতে খাবারের জন্যে বেছে নিতে পারেন রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, নিরিবিলি, বোগদাদিয়ার মত রেস্টুরেন্ট কিংবা পছন্দমত কোন রেস্টুরেন্ট। ভোরের সূর্যোদয় দেখতে চাইলে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যান।
২য় দিনঃ
ভোরের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত অন্যরকম সুন্দর। এই সৌন্দর্য দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন না। ভোরে উঠে চলে যান সৈকতে। অন্যরকম সমুদ্র সৈকতের দেখা পাবেন। ফিরে এসে সকালের নাস্তা করে নিন। নাস্তা সেরে সিএনজি বা ট্যাক্সি/অটোরিক্সা নিয়ে রামু বৌদ্ধ বিহারে চলে যান। রামু যাবার ট্যাক্সি বা অটোরিক্সা সাধারণত জনপ্রতি ভাড়া নেয় ৪০ টাকা করে আর রিজার্ভ নিতে চাইলে যাওয়া আসা ও ঘুরে দেখার সময় সহ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাগবে। অটোরিক্সায় ৫-৬ জন অনায়াসে ভ্রমণ করতে পারবেন। ৩-৪ ঘন্টা সময় নিয়ে গেলে মোটামুটি অনেক গুলো বৌদ্ধ বিহার ঘুরে দেখতে পারবেন।

দুপুরের আগে ফিরে আসুন রামু থেকে। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে অটো বা সিএনজিতে চড়ে বেরিয়ে পড়ুন হিমছড়ি ও ইনানীর উদ্দেশ্যে। হিমছড়ি ও ইনানী ঘুরে দেখতে ৩-৪ ঘন্টা সময় হাতে রাখতে হবে। হিমছড়ির ঝর্ণা দেখে ঘুরাঘুরি শেষ করে ইনানী বিচে সূর্যাস্থ দেখতে চলে যান। সূর্যাস্থ দেখে কক্সবাজার ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। সন্ধ্যার পরের সময় চাইলে বীচে কাটিয়ে দিন। কেনাকাটার প্রয়োজন হলে বার্মিজ মার্কেটে ঢু মারতে পারেন। রাতে খাবারের খেতে পারেন কক্সবাজারের ঝাউতলার কোন রেস্টুরেন্টে সেই সাথে সেখানে রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড ঘুরে দেখলে ভাল লাগবে।
৩য় দিনঃ
পরদিন সকালে নাস্তা সেরে চলে যান ট্রলার ঘাটে। যেকোন অটোচালককে বললেই হবে মহেশখালি যাবেন। ট্রলার ঘাট হতে চাইলে স্পীডবোট রিজার্ভ নিতে পারবেন অথবা লোকাল ট্রলারে যেতে পারবেন মহেশখালি। মহেশখালি ঘাটে গিয়ে দরদাম করে ইজিবাইক/রিক্সা ঠিক করে ঘুরে দেখুন মহেশখালির দর্শনীয় স্থান গুলো। মহেশখালি ঘুরে দেখা শেষে ফিরে আসুন কক্সবাজারে। বিকেল সন্ধ্যার সময়টুকু শেষবারের মতো আবারও বীচে কাটিয়ে দিন। রাতের খাবার খাওয়া শেষে আপনার ফিরে আসার সময়ের আগেই বাস কাউন্টারে চলে যান।
যেভাবে কক্সবাজার যাবেন
ঢাকা থেকে সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন ইত্যাদি বাসে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারবেন। নন এসি বাস ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা এবং এসি বাস বাস বিভিন্ন ক্লাস অনুযায়ী ভাড়া ১২০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার পর্যন্ত।
এছাড়া ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশান হতে সোনার বাংলা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী ট্রেনে চট্টগ্রাম এসে চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকা অথবা দামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে এস আলম, হানিফ, ইউনিক ইত্যাদি বাসে কক্সবাজার যেতে পারবেন। বাস ভেদে ভাড়া লাগবে ২৮০ থেকে ৫৫০ টাকা।
আর চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার কিংবা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে সরাসরি ঢাকা থেকে মাত্র ৪৫ থেকে ৬০ মিনিটে কক্সবাজার আসতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
কক্সবাজারের বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। অফ সিজনে সাধারণত অগ্রিম বুকিং না দিয়ে গেলেও হোটেলে রুম পাওয়া যায়। তবে পিক সিজনে অগ্রিম হোটেল বুকিং দিয়ে যাওয়াই উত্তম। কক্সবাজারের উল্লেখযোগ্য হোটেল/মোটেল/রিসোর্টের মধ্যে আছে মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশেন প্যারাডাইজ, লং বীচ, কক্স টুডে, হেরিটেজ, সী প্যালেস, সী গাল, কোরাল রীফ, নিটোল রিসোর্ট, আইল্যান্ডিয়া, বীচ ভিউ, সী ক্রাউন, ইউনি রিসোর্ট ইত্যাদি। মান ও সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের হোটেল আছে। আপনার বাজেট এবং চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন মানের হোটেলে ১,০০০-২০,০০০ টাকা দিয়ে রাত্রি যাপন করতে পারবেন।
কোথায় কি খাবেন
প্রায় প্রতিটি হোটেলেই নিজস্ব খাবার ব্যবস্থা আছে। তবে বাইরে খেতে চাইলে কক্সবাজারে প্রায় সকল ধরণ ও মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। বাজেট রেস্টুরেন্টের মধ্যে জনপ্রিয় হলো রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, নিরিবিলি, বোগদাদিয়া ইত্যাদি। সিজন অনুযায়ী খাবারের দামও কম/বেশী হতে পারে।
আরও কিছু তথ্য
কক্সবাজারের উল্লেখিত স্থান গুলোর আরও বিস্তারিত পড়ুন নিচের লিংক গুলো থেকে। এতে করে প্রতিটি জায়গা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী ভ্রমণ পরিকল্পনা করে নিতে পারবেন।
- কক্সবাজার ভ্রমণ গাইড
- মহেশখালি ভ্রমণ গাইড
- ইনানী ভ্রমণ গাইড
- হিমছড়ি ভ্রমণ গাইড
- রামু বৌদ্ধ বিহার
- মেরিন ড্রাইভ রোড
- রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ড
এছাড়া আরও পড়ুনঃ
কক্সবাজার ট্যুর প্ল্যান নিয়ে আরও কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জিজ্ঞেস করুন। আর আপনার কক্সবাজার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থাকলে তা অন্য সবার সাথে শেয়ার করুন কমেন্টে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে।