করোনা ভাইরাস (Corona Virus), যার পোশাকি নাম কোভিড-১৯। এই ভাইরাসের সংক্রমণকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘বিশ্ব মহামারি’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। জনস্বার্থে ভ্রমণ গাইডের এই পোস্টে আমরা চেষ্টা করবো করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও বাংলাদেশের সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (IEDCR) এর আলোকে যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শ নিয়মিত ভাবে আপডেট জানিয়ে দেওয়ার।
করোনা ভাইরাসের লক্ষণ
ভাইরাস শরীরের ঢোকার পর সংক্রমের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় ২ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। সাধারণ লক্ষণগুলি হলো জ্বর, ক্লান্তি এবং শুকনো কাশি। কিছু রোগীর শরীর ব্যথা, সর্দি এবং সর্দিতে নাক বন্ধ হওয়া, গলা ব্যথা এবং ডায়রিয়া হতে পারে। ধীরে ধীরে সেই সাথে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
বয়স্ক ব্যাক্তিরা এবং যাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, কিডনি সমস্যা বা ডায়াবেটিসের মতো রোগ আছে তাঁদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যাদের জ্বর, কাশি এবং শ্বাস কষ্ট আছে তাঁদের চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া উচিত।
করোনা ভাইরাস ছড়ায় যেভাবে
ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের কাছ থেকে অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির দেওয়া হাঁচি বা কাশির সুক্ষ্মকণা কোন সুস্থ ব্যক্তি যখন শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে অন্যদের ভিতরে গিয়ে একজন থেকে অন্যজনের মাঝে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশির নিঃসৃত ফোটাগুলি, লালা, থুথু, কফ বা সর্দির ফোটা যেসব স্থানে লেগে তা কোনভাবে যদি সুস্থ ব্যাক্তির মুখ, নাক বা চোখ দিয়ে বা নিশ্বাসে গ্রহণ করলে ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।
অনেক সময় আক্রান্ত ব্যাক্তির লক্ষণ ভাল করে প্রকাশ নাও হতে পারে। অল্প জ্বর অনুভব করতে পারে। কিংবা পূর্ণ লক্ষণ দেখা দেবার আগেই আক্রান্ত ব্যাক্তি থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
ভাইরাসের সংক্রমণ সুরক্ষার পরামর্শ
এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশেষজ্ঞরা কিছু সতর্কতামূলক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এসব সতর্কতা অবলম্বন করলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কমে আসবে।
হাত ধোয়াঃ বারবার প্রয়োজন মতো সাবান পানি অথবা অ্যালকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে। বাইরে থেকে আসার পর, জীবাণু আছে এমন কিছু ধরার পর, আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে আসার পর। অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে আপনার হাত ভাইরাস মুক্ত রাখতে হবে। করোনা প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞদের এই উপদেশ অবশ্যই মানতে হবে।
মুখমন্ডল স্পর্শ থেকে বিরত থাকুনঃ হাত দিয়ে মুখ, নাক ও চোখ স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ হাত অনেক জিনিস স্পর্শ করে এবং তাতে ভাইরাস হাতে আসতে পারে। হাতে ভাইরাস থাকলে তা মুখ, নাক বা চোখে স্পর্শ করলে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। যখনই স্পর্শ করার প্রয়োজন হবে আগে ভাল করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
সোশ্যাল ডিসটেন্সঃ আক্রান্ত ব্যক্তি বা আক্রান্ত হতে পারেন এমন সম্ভাবনাময় ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। কমপক্ষে ১ মিটার (৩ ফিট) দূরে থাকতে হবে। শুধু আক্রান্ত ব্যক্তি নয়, সম্ভব হলে সবার কাছ থেকেই দূরত্ব বজায় কথা বলা বা হাটাচলা করতে হবে।

শিষ্টাচার মেনে চলাঃ আক্রান্ত হলে কাশি শিষ্টাচার অনুশীলন করতে হবে। হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখতে হবে। কফ থুথু সেখানে সেখানে ফেলা যাবেনা। টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং যথাযথ স্থানে তা ফেলতে হবে।
এড়িয়ে চলাঃ যেসব জায়গায় মানুষ বেশি জড়ো হয় সেসকল স্থান এড়িয়ে চলতে হবে। সকল ধরণের সভা সমাবেশ, মিছিল, সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতে হবে। এক কথায় মানুষের ভিড়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
গণপরিবহণঃ গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে হবে। যদি একবারেই সম্ভব না হয় তাহলে সতর্কতার সহিত চলাফেরা করতে হবে এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
স্পর্শ থেকে বিরত থাকাঃ অসংখ্য মানুষ স্পর্শ করে এমন আবরণ বা জিনিস স্পর্শ করবেন না। যেসব জিনিস পাবলিকলি ব্যবহৃত হয় তা হাত দিয়ে বা অন্য কোনভাবে স্পর্শ করার আগে সতর্ক থাকতে হবে। পাবলিক অফিসের ডেস্কে বসার আগে কম্পিউটার, কিবোর্ড এবং মাউস জীবানুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। লিফটের বাটন, রেলিং, পাবলিক স্পেসের দরজার হাতল, নব, হোটেল রেস্টুরেন্টের গ্লাস, চায়ের কাপ প্রভৃতিও এ তালিকাভুক্ত। মোটকথা কারও স্পর্শে ভাইরাস থাকতে পারে এমন কিছু ব্যবহারের আগে সতর্ক হোন এবং স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত পরিস্কার করুন।
বাইরে থেকে আসার পরঃ বাইরে থেকে আসার পর ঘরে প্রবেশের সময় নিজের পোশাক ও ব্যবহার্য একটি নির্দিষ্ট ঘরে পরিবর্তনের অভ্যাস করুন এবং হাত ও উন্মুক্ত স্থান ভাল করে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রয়োজন মনে করলে একবার ব্যবহার করা পোশাক পরিস্কার না করে আবার ব্যবহার করবেন না। বাইরের পোশাক নিয়ে ঘরে ঢুকেই বিছানায় বা সোফায় বসার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
ব্যবহার্য জিনিসঃ প্রতিনিয়ত স্পর্শ করতে হয় নিজের এমন ব্যবহার্য জিনিস যেমন মোবাইল, মানিব্যাগ, পানির বোতল, গ্লাস, কলম, চায়ের চাপ ইত্যাদি যতদূর সম্ভব স্যানিটাইজ করে ব্যবহার করুন।
মাস্ক ব্যবহারঃ মুখে মাস্ক পড়ে সামান্য সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে। করোনা ভাইরাসের তরল উৎস যেমন হাঁচি-কাশির ফোটা থেকে ফেস মাস্ক কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে। কিন্তু এর মাধ্যমে ভাইরাসের অতি সূক্ষ্মকণা আটকানো একেবারে সম্ভব নয়। তবে যিনি ভাইরাসে আক্রান্ত তার অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
টাকা-পয়সাঃ ব্যাংক নোট বা টাকায় নানা ধরণের জীবাণুর উপস্থিতি থাকতে পারে। ফলে ব্যাংক নোটের মাধ্যমে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার কথাও বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। তাই টাকা পয়সা হাত দিয়ে ধরার পর হাত ধুয়ে নিন এবং সচেতন থাকুন।
শুভেচ্ছা বিনিময়ঃ করমর্দন এবং কোলাকুলির মাধ্যমেও করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে। এজন্য করমর্দন এবং কোলাকুলির না করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
আলদা ব্যবহারঃ ঘরের ভিতর এবং বাইরের জন্যে ব্যবহার্য জিনিস আলাদা করে রাখুন। যেমন বাইরে যে সব পোশাক পরিধান করবেন তা ঘরের ভিতর ব্যবহার করবেন না। ঘরের জিনিসের সাথে বাইরের জিনিস যেন না মিশে তা খেয়াল রাখবেন।
শিশু ও বয়স্কদের জন্যে বিশেষ কেয়ারঃ বয়স্ক মানুষদের বিশেষ করে যিনি অন্যান্য রোগে আক্রান্ত তাঁদের প্রতি স্পেশাল যত্ন নিতে হবে। বয়স্ক মানুষ আক্রান্ত হলে মৃত্যুহার অনেক বেশি।
ভাইরাস একটি অদৃশ্য বিষয়। তা কিভাবে আপনাকে আক্রান্ত করবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন সবকিছুর মূল হচ্ছে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা। হাত না ধুয়ে নিজের মুখমণ্ডল স্পর্শ করবেন না। সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য নিয়মিত ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজে পরিস্কার থাকবেন এবং আশেপাশের সবাইকে পরিস্কার রাখার ব্যাপারে সচেতন করবেন।
কোয়ারেন্টিন কখন এবং কি করণীয়
যিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বা এমন সম্ভাব্য কারো সংস্পর্শে গিয়েছেন তার জন্য কোয়ারেন্টিন প্রযোজ্য। কোয়ারেন্টিন মানে অন্য কারো সংস্রব এড়িয়ে থাকা। আর কেউ করোনা ভাইরাস পজিটিভ হয়ে থাকলে তাকে হাসপাতালে আইসোলেশনে যেতে হবে। কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে যা করণীয়-
- নিজের রুমে সম্পূর্ণ একা থাকুন।
- পৃথক টয়লেট ব্যবহার করুন।
- নিজের ব্যবহারের পোশাক, গামছা ইত্যাদি আলাদা রাখুন।
- নিজের বিছানাও আলাদা করতে হবে।
- যথাসম্ভব অন্যের সাক্ষাৎ এড়িয়ে চলুন, এমনকি পরিবারের সদস্যদের থেকেও।
- প্রয়োজনে কারো সামনে যেতে হলে মাস্ক পরে থাকুন এবং যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখুন।
- ঘন ঘন হাত ধুয়ে হবে।
- যেসব জায়গায় বারবার স্পর্শের সম্ভাবনা রয়েছে, যেমন- মোবাইল, কম্পিউটার, দরজার হাতল ইত্যাদি দিনশেষে ভালভাবে জীবাণুনাশক দিয়ে মুছে ফেলুন।
- অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
কতটা ভয়ংকর এই ভাইরাস?
ভাইরাস সংক্রমের অসুস্থতা সাধারনত হালকা হয়। বিশেষ করে বাচ্চা এবং অল্প বয়স্কদের ক্ষেত্রে। তবে এটি মারাত্মক অসুস্থতার কারণ হতে পারে। বয়স্ক এবং অসুস্থদের জন্যে এটি আরও মারাত্মক। বয়স্ক এবং নানা জটিল অসুস্থদের এই রোগে মৃত্যুহার অনেক বেশি।
যেহেতু একজনের কাছ থেকে অন্যজন সহজেই আক্রান্ত হয়। তাই নিজের পরিবার, প্রিয়জন এবং অন্যদের সুরক্ষিত রাখতে যে বয়সেরই কেউ আক্রান্ত হোক না কেন খুব গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া আমাদের দেশের স্বাস্থ্য সেবার মানের বিবেচনায় রোগটি আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তা সবার উচিত সচেতন থাকা। নিজ, পরিবার ও অন্যদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করা।

করোনা আক্রান্ত হলে চিকিৎসা কী?
ভাইরাসটি নতুন হওয়াতে এখনই কোন টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এমনকি নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসাও নেই, যা থেকে এ রোগ ঠেকানো যেতে পারে। আপাতত প্রতিকার হিসেবে এ ভাইরাস বহনকারীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে বলছেন বিজ্ঞানীরা। ডাক্তারদের পরামর্শ, বারবার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা।
জ্বর আসলেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এমন নয়। যেহেতু জ্বর যেকোন ফ্লুতে আক্রান্ত হলেই হতে পারে। তাই আগে ভাল করে খেয়াল করুন করোনা ভাইরাসের সবগুলো লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে কিনা। বিশেষ করে শ্বাস কষ্ট হচ্ছে কিনা। যদি জ্বর, কাশি এবং শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং জরুরী প্রয়োজনে হটলাইন নাম্বার গুলোতে যোগাযোগ করুন।
একটা জিনিস মাথায় রাখা উচিত, শুধু সন্দেহের বশে হসপিটাল গুলোতে ভিড় করা উচিত নয়। এতে পটেনশিয়াল কোন রোগীর সংস্পর্শে বরং ভাইরাস ছড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা উপদেশ দিচ্ছেন, করোনা আক্রান্ত সংন্দেহ হলে প্রথমে কয়েকদিন পর্যবেক্ষন করুন। নিজেকে সেলফ কোয়ারেন্টিনে রাখুন। যদি করোনা ভাইরাস আক্রান্তের আরও লক্ষণ দেখা দিতে থাকে তাহলে IEDCR অথবা জরুরী স্বাস্থ্যসেবার জন্যে যোগাযোগ করুন এবং নিকটস্থত করোনা ইউনিট আছে এমন হসপিটালে যোগাযোগ করুন।
জরুরী যোগাযোগ নাম্বার
করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত যেকোন তথ্যের জন্যে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (IEDCR) সাথে যোগাযোগ করতে হবে। করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত সেবা পেতে আইইডিসিআর এর নিম্নোক্ত হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করুন।
০১৪০১-১৮৪৫৫১, ০১৪০১-১৮৪৫৫৪, ০১৪০১-১৮৪৫৫৫, ০১৪০১-১৮৪৫৫৬, ০১৪০১-১৮৪৫৫৯, ০১৪০১-১৮৪৫৬০, ০১৪০১-১৮৪৫৬৩, ০১৪০১-১৮৪৫৬৮, ০১৯২৭-৭১১৭৮৪, ০১৯২৭-৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭-০০০০১১, ০১৯৩৭-১১০০১১, ০১৯৪৪-৩৩৩২২২, ০১৫৫০-০৬৪৯০১, ০১৫৫০-০৬৪৯০২, ০১৫৫০-০৬৪৯০৩, ০১৫৫০-০৬৪৯০৪, ০১৫৫০-০৬৪৯০৫
ই-মেইলঃ iedcrcovid19@gmail.com
করোনা বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কল সেন্টার ৬২৬৩, ১৬২৬৩ ও ৩৩৩
কোন হাসপাতালে চিকিৎসা করা যাবে?
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহজনক রোগীদের জন্য রেফারেন্স হাসপাতাল হিসেবে দেশের কয়েকটি হাসপাতাল নির্দিষ্ট রাখা হয়েছে। হাসপাতালগুলো হল-
- মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা
- কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, ঢাকা
- মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা
- সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ঢাকা
- কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা
করোনা ভাইরাস সনাক্তের পরীক্ষা যেখানে করবেন
বর্তমানে শুধু ঢাকার IEDCR থেকেই করোনা ভাইরাস সনাক্তের পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। আপনি IEDCR এর যোগাযোগ নাম্বার গুলোতে ফোন করে রোগী সম্পর্কে বিস্তারিত জানালে যদি তারা পরীক্ষা করার মত মনে করেন তাহলে আপনাকে কি করতে হবে সেই ব্যাপারে পরামর্শ দিবে। শিগ্রই IEDCR সহ আরও কিছু প্রতিষ্টানে পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হবে। চট্টগ্রামের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস এ আগামী শনিবার থেকে করোনা সনাক্ত করার পরীক্ষা শুরু করার কথা রয়েছে।
আরও কিছু পরামর্শ
- খুব প্রয়োজন না হলে বাসার বাইরে যাবেন না।
- কর্মক্ষেত্রে না গিয়ে বাসায় বসে কাজ করা সম্ভব হলে বাসায় থেকেই কাজ করুন।
- সোশ্যাল ডিসটেন্স অর্থাৎ সবার সাথে দূরত্ব বজায় রাখুন।
- পরিস্কার পরিচন্ন থাকুন, অবশ্যই তা থাকতে হবে।
- আবারও বলছি, বার বার হাত ভাল করে পরিস্কার রাখুন।
- কোন লক্ষণ দেখা গেলে নিজেকে কোয়ারেন্টিন (অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করা) করে রাখুন। এতে আপনার আশেপাশের মানুষজন নিরাপদ থাকবে।
- দরকারী হটলাইন নাম্বার ও প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো সংগ্রহ করে রাখুন।
- অতি প্রয়োজনীয় দরকারী জিনিস কিনে রাখুন। তবে মনে রাখবেন প্রয়োজনের বেশি কিছুই কিনে রাখবেন না।
- প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে রাখুন।
- বাসায় অসুস্থ এবং বয়স্কদের দিকে বিশেষ নজর রাখুন।
- গুজবে কান দিবেন না। প্যানিকড হবেন না। অথেনটিক নিউজ দেখে কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন।
- প্রয়োজনে যথাযত কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন।
- মনে রাখবেন এই দুর্যোগ সরকারের একার পক্ষে সামলানো সম্ভব হবেনা। যার যার অবস্থান থেকে নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
হাত ধোয়ার সঠিক নিয়ম
হাত পরিস্কার করতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারই ব্যবহার করতে হবে এমন কোন কথা নেই। সাবান দিয়ে পরিস্কার পানিতে ভাল করে (কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড) ধুয়ে নিলে হাত জীবানু মুক্ত হবে। যেখানে সাবান পানির ব্যবস্থা নেই সেখানে হাত জীবানুমুক্ত করতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন। নিচের ভিডিওতে সাবান দিয়ে হাত পরিস্কার করার সঠিক নিয়ম দেখে নিন।
মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম
কখন মাস্ক ব্যবহার করবেন?
- আপনার সর্দি,কাশি,জ্বর,গলাব্যথা বা শ্বাসকষ্ট এইসবের যে কোন কিছু হলে।
- আপনি যদি অসুস্থ ব্যাক্তির পরিচর্যাকারী হয়ে থাকেন।
- আপনি যদি অসুস্থ কারও নিকটে থাকেন।
- গত ১৪ দিনের ভিতর বিদেশ থেকে ফিরেছে এমন কারো কাছে থাকলে।
- স্বাস্থ্য কর্মী বা সেবা প্রদানকারী কেউ হলে।
মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম
- মাস্ক এমনভাবে বাধুন যেন নাক ও মুখ ভালো করে ঢেকে থাকে।
- মাস্ক ব্যবহারের সময় হাত দিয়ে মাস্ক ধরা থেকে বিরত থাকুন।
- মাস্ক খোলার সময় সামনের দিকে না ধরে পিছন থেকে খুলুন।
- মাস্ক খোলার পর হাত সাবান দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন।
- ওয়ান টাইম মাস্ক হলে ব্যবহারের পর নিরাপদ জায়গায় ফেলুন অথবা নষ্ট করে ফেলুন।
- পুনরায় ব্যবহারযোগ্য মাস্ক হলে আবার ব্যবহারের পূর্বে সাবান দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন।
বাসায় মাস্ক বানানোর উপায়ঃ https://youtu.be/xVLZ1Yih7_E
যেসব খাবার খাবান
যে সব খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় সে সব খাবার নিয়মিতভাবে খেতে হবে। যা যেকোনো ভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তারের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে সহজেই। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখুন –
- পর্যাপ্ত পানি ও তরল জাতীয় খাবার পান করুন।
- যে সব সবুজ শাক সবজিতে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, মিনারেল ও ফাইবার রয়েছে সেসব শাক-সবজি খাওয়া উপকারী।
- টক জাতীয় ফলে আছে ভিটামিন সি যা সর্দি, কাশি, জ্বরের ক্ষেত্রে খুবই উপকারি। যেকোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে ভিটামিন সি।
- রসুনে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ঠান্ডা লাগা ও ইনফেকশেন দূর করতে খুবই উপকারী।
- নিয়মিত টক দই খান কারণ, টক দই রোগের সঙ্গে লড়াই করার অন্যতম হাতিয়ার।
- মধুতে আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। প্রতিদিন এক চা চামচ মধু খাওয়ার অভ্যাস করুন।
দরকারী তথ্য
করোনা ভাইরাস নিয়ে নানা রকম তথ্য সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার মধ্যে অনেক তথ্যই ভুল ও ভিত্তিহীন ভাবে ছড়াচ্ছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে যেকোন পরামর্শ, উপদেশ, করণীয় এবং বিশ্বব্যাপী বর্তমান অবস্থা জানতে সবসময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) ওয়েবসাইটের তথ্য দেখুন।
WHO এর করোনা ভাইরাসের সকল তথ্যঃ http://bit.ly/2TXesfA
WHO এর পরামর্শ ও করণীয়ঃ http://bit.ly/2TTYZN1
বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (IEDCR) বাংলাদেশের করোনা ভাইরাসের সকল তথ্য সরবরাহ, নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা করে থাকে। নভেল করোনা ভাইরাস নিয়ে পরামর্শ, করণীয়, ও তথ্যের জন্যে IEDCR এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট দেখুন।
IEDCR এর করোনা আপডেটঃ http://bit.ly/2U9Ypd7
বিশ্বব্যাপী লাইভ আপডেটঃ worldometers.info/coronavirus/
নিজেকে সুরক্ষা কিভাবে করবেন? WHO এর পরামর্শঃ
ভ্রমণ সংক্রান্ত পরামর্শ
যেহেতু এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি ভাইরাস এবং এর ভয়াবহতা ও বিস্তার সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে জানা এখনো সম্ভব হয়নি। তাই এই মুহুর্তে দেশের বাইরে ও দেশে ভ্রমণ পরিহার করুন। দেশে বা দেশের বাইরে যে কোন জায়গা বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা থাকলে তা বাতিল করুন।
সুস্থ থাকুন ও নিরাপদ থাকুন। নিজে সচেতন হোন এবং সবাইকে সচেতন করুন। করোনা ভাইরাস নিয়ে যে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন। আমরা চেষ্টা করবো আপনার প্রশ্নের উত্তর জানাতে।
তথ্যসূত্রঃ IEDCR, who.int, bbc, prothomalo
ভ্রমণ সংক্রান্ত যে কোন তথ্য ও আপডেট জানতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে।